বিশেষ প্রতিবেদন: বিংশ শতকের সূচনা লগ্ন। তখনও সমাজে নারীরা নিজ অধিকার থেকে বহুলাংশে বঞ্চিত। সেই সময়ে দাঁড়িয়ে হাওড়ার আমতা জয়পুরের কাঁকরোল গ্রামের বালিয়াল পরিবারের দুর্গাপুজোর সূচনা ঘটল। পুজো শুরু হয় এক মহিলার হাত ধরে। মহিলা এলোকেশী দেবী নামে পরিচিত ছিলেন।
তিলোত্তমার ‘থিম’ কেন্দ্রীক আড়ম্বরপূর্ণ পুজোর জৌলুস, আলোর রোশনাই যেখানে শেষ হয়ে যায়, ঠিক সেখান থেকেই শুরু হয় বাংলার প্রত্যন্ত গ্রামের শারোদৎসব। পল্লিবাংলার অন্দরমহল থেকে আজও উঁকি দেয় শতাব্দী প্রাচীন ঐতিহ্যবাহী কতশত পুজো। তাদেরই অন্যতম এলোকেশীর পুজো। এই পুজো এবছর ১২২ বছরে পা দেবে। বালিয়াল পরিবারের উঠোন লাগোয়া অধিষ্ঠিত রয়েছেন দেবী চণ্ডী।
প্রায় ৩০০ বছরের পুরানো এই চণ্ডীতলা। পুজো ক’দিন মহামায়ার আরাধনার পাশাপাশি ‘জয়চণ্ডী’ দেবীকে কেন্দ্র করেও বিভিন্ন উৎসব, অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়। আর পাঁচটা বনেদি বাড়ির মতোই জৌলুস হারিয়েছে এই প্রাচীন পুজো। তবুও এলোকেশী দেবীর প্রপৌত্রদের হাত ধরে শতবছরের ইতিহাস,ঐতিহ্য ও বনেদিয়ানার ব্যাটনকে বহন করে চলেছে কাঁকরোল গ্রামের এই পুজো। দেবী দুর্গার আগমনকে কেন্দ্র করে জাগ্রত দেবী জয়চণ্ডীকে সঙ্গে নিয়ে পুজোর ক’দিন মেতে ওঠেন জয়পুরের এই গ্রামের বাসিন্দারা।
বাংলা তথা বাঙালির প্রধান উৎসব দুর্গাপুজো। ভারতবর্ষ ও পৃথিবীর প্রাচীন রাষ্ট্রগুলিতে দেবীপুজোর চল থাকলেও উৎসব হিসাবে দুর্গাপুজোর প্রবর্তন, প্রসার এবং ব্যাপ্তি ঘটেছে এই বাংলার মাটি থেকেই। বাংলায় ঠিক কে এই পুজোর প্রচলন করেছিলেন তা নিয়ে বহু বিতর্ক রয়েছে। যুগের সঙ্গে পাল্লা দিয়ে স্বাদ বদলাচ্ছে মানুষের ভাবনার ও সংস্কৃতির।
ঐতিহ্য ও ইতিহাসকে পিছনে ফেলে মানুষ মেতে উঠছে আধুনিকতার ছোঁয়ায় বর্ণময় থিম পুজোয়। আড়ম্বরপূর্ণ থিম পুজোর এই হিড়িকেও আজও বাংলার বনেদি পরিবার, জমিদারবাড়ি কিংবা রাজপরিবার পরিচালিত দুর্গাপুজোগুলি শতাব্দী প্রাচীন সংস্কৃতির ধারক ও বাহকরূপে দাঁড়িয়ে রয়েছে।