বিশেষ প্রতিবেদন: একটি বিশিষ্ট দৈনিকে গৃহস্থদের বিদ্যুত খরচের সিংহভাগ পুরুষদের জন্যে আর নারীরা এ ক্ষেত্রেও বঞ্চনার শিকার হচ্ছেন। সরাসরি লিঙ্গবৈষম্যের শিকার হচ্ছেন মানুষ এমন দাবী করেছে ওই দৈনিকের সম্পাদকীয় বিভাগের ওই লেখা। এই বিষয়ে প্রতিবাদ জানালেন বিশিষ্ট শিক্ষাবিদ শুভেন্দু মজুমদার। তাঁর দাবী এসব পশ্চিমবঙ্গে হয় না। যে রাজ্যে সরকারি থেকে বেসরকারি বিদ্যুৎ সংস্থার বিলে রয়েছে বিস্তর গোঁজামিল, যার মাশুল গুনতে হয় আম জনতাকে
তিনি বলেছেন, ওই বহুলপ্রচলিত বাংলা দৈনিক সংবাদপত্রে যে কথা বলা হয়েছে তা অকারণ লিঙ্গ বৈষম্য টেনে আনা হচ্ছে। এমনটা অন্যান্য রাজ্যে ঘটলেও এ রাজ্যে ঘটে না। সাধারণ মানুষ শিকার হচ্ছেন বিদ্যুৎ সংস্থার বঞ্চনার।
শুভেন্দুবাবু বলেছেন, “আপনারা যাঁরা এই সংবাদপত্রটি নিয়মিত পাঠ করেন বা ( অন্য কোন বাংলা সংবাদপত্র) তাঁরা কি কোনদিন দেখেছেন এ রাজ্যের দুটি বিদ্যুত সংস্থা WBSEDCL এবং CESC যেভাবে পালা করে বিদ্যুতের মাশুল বাড়াচ্ছে তা নিয়ে কোন উত্তর সম্পাদকীয় নিবন্ধ বা কোন প্রতিবেদন ? চ্যালেঞ্জ দিয়ে বলছি , এমন কোন উত্তর সম্পাদকীয় প্রতিবেদন গত দশ বছরে একবারও বেরোয়নি ।এমনকি , যেখানে পেট্রোল ডিজেলের মূল্য প্রতিদিন লিটার প্রতি দুই পয়সা বাড়লে প্রতিদিনই সংবাদপত্রের প্রথম পাতায় জায়গা পায় ( আজও এই পত্রিকার প্রথম পাতায় রয়েছে) সেখানে বিদ্যুতের মাশুলবৃদ্ধি নিয়ে সংবাদমাধ্যমগুলির এই হিরন্ময় নীরবতা কিসের ইঙ্গিত ? বিদ্যুতের বিলের গোঁজামিল সাধারণ মানুষকে বোঝাতে পারবেন এমন অর্থনীতিবিদ কি সারা রাজ্যে একজনও নেই ?
যার যত বিদ্যুতের ব্যবহার বেশি তাকে তত বেশি হারে বিদ্যুতের মাশুল দিতে হবে। এই নীতি সারা দেশে শুধু বিদ্যুতের ক্ষেত্রেই কেন কার্যকর হবে এই ব্যাপারটা আমার মাথায় ঢোকে না । এটা যদি একটা গরীব-দরদী নীতি হয় তবে তো আমার মনে হয় পেট্রল ব্যবহারের ক্ষেত্রেও এই নীতি অনুযায়ী তিন বা চার ধরণের রেট থাকা বাঞ্ছনীয় । যে লোকটি দু-চাকার স্কুটার ব্যবহার করেন আর যিনি রোলস রয়েস বা মার্সিডিস চাপেন দুজনেই কেন একই দরে পেট্রল কিনবে ?”
তিনি মূলত আক্রমণ করেছেন WBSEDCLকে। কারণ সিইএসসি’র বিদ্যুৎ মাশুল যে বেশি তা কারও অজানা নয় কিন্তু রাজ্য সরকারী সংস্থা বিলে যে ভালোই গোঁজামিল ধরিয়ে দিচ্ছে তার প্রমাণ অঙ্কের মাধ্যমে বোঝানোর চেষ্টা করেছেন শিক্ষাবিদ। তিনি বলেছেন, WBSEDCL এর বিদ্যুতের রেট হল : প্রথম ১০২ ইউনিট ৫ . ২৬ টাকা। তার পরের ৭৮ ইউনিট ৫ . ৮৬ এবং তারপরের ১২০ ইউনিট ৬ . ৭৩ টাকা।”
তিনি বলেছেন, “ধরা যাক , একটি সাধারণ নিম্ন-মধ্যবিত্ত পরিবারের মাসে গড় বিদ্যুতের খরচ ১০০ ইউনিট । সুতরাং এই একশো ইউনিটের জন্যে তাঁর বিদ্যুত মাশুল হওয়া উচিৎ ১০০ x ৫ . ২৬ = ৫২৬ . ০০ টাকা । তিন মাসের জন্য বিদ্যুতের মাশুল হয় ৫২৬ . ০০ x ৩ = ১৫৭৮ টাকা । কিন্তু WBSEDCL কী করছে একবার দেখে নিন । WBSEDCL এর রেট চার্ট অনুযায়ী তিন মাসের জন্য তিনশো ইউনিটের মাশুলের হিসেব হল : প্রথম ১০২ ইউনিট x ৫ . ২৬ = ৫৩৬ . ৫২। পরের ৭৮ইউনিট x ৫ . ৮৬ = ৪৫৭ . ০৮। পরের ১২০ইউনিট x ৬ . ৭৩ = ৮০৭ . ৬০। এমনভাবেই ৩০০ ইউনিট = ১৮০১ . ২০ টাকা। এবারে আপনি দেখুন জনদরদী নীতি অনুযায়ী WBSEDCL আপনার থেকে তিন মাসের বিদ্যুত মাশুল বাবদ কত টাকা বেশি নিচ্ছে দেখুন। ১৮০১ . ২০ — ১৫৭৮ . ০০ = ২২৩ . ২০ টাকা ।” কটাক্ষের সুরে তিনি বলেছেন, “হে প্রভুভক্ত সংবাদমাধ্যম সখা সকল ! আপনারা আর কতদিন যোগনিদ্রায় মগ্ন থাকবেন ও লিঙ্গবৈষম্যের এইসব ফালতু বিশ্লেষণে এভাবে কালাতিপাত করবেন?”