নিউজ ডেস্ক: আকাশে লিখে গিয়েছেন আরও এক ‘মেঘনাদবধ কাব্য’ -অবশ্যই বিমানের কেরামতিতে। মেঘের আড়াল থেকে নেমে আসত তাঁর বিমান। শত্রুপক্ষের উপর হামলা করেই অদৃশ্য হতো নিমেষে। প্রথম বিশ্বযুদ্ধের সময়ের ঘটনা। ভারতীয় বাঙালি যুদ্ধবিমান চালক ইন্দ্রলাল আকাশে ইন্দ্রজাল ছড়িয়েছিলেন।
ইন্দ্রলাল রায় এই নাম বিশ্ব আকাশ যুদ্ধের অনবদ্য সৈনিকদের তালিকায় জ্বললজ্বল করছে। তিনি সেই বিরলতম ভারতীয় যুদ্ধ বিমান চালক যাঁর নামটি প্রথম বিশ্বযুদ্ধে জার্মানি ও তাদের সহযোগী শক্তির কাছে আতঙ্কের কারণ।
শত্রুপক্ষ কি কম শক্তিশালী? তারাও তৈরি ছিল। ব্রিটিশ শাসিত ভারতীয় নাগরিক হিসেবে ইন্দ্রলাল রায় ফরাসি বিমান বহরে যোগ দেন। তাঁর উড়ান কৌশলে চমকে গিয়েছিলেন বিশ্বে প্রথম আকাশ যুদ্ধের অন্যান্য সেনাপতিরা। ঠিক যেন শঙ্খচিল। উপর থেকে হামলা করে শত্রুকে খতম করছে ইন্দ্রলালের যুদ্ধ বিমান। অক্সফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র ইন্দ্রলাল রায় রোমাঞ্চপ্রিয়। সেই কারণে বেছে নিয়েছিলেন এয়ারফোর্স। ১৮৯৮ সালে কলকাতায় জন্ম হয় তাঁর।
১৯১৭ সালে তিনি রয়েল ফ্লাইং কর্পসে যোগ দেন। সেকেন্ড লেফট্যানেন্ট হন। প্রথম বিশ্বযুদ্ধ শুরু হয়ে গেল।
মেঘের আড়ালে ইন্দ্রজাল ছড়ালেন ইন্দ্রলাল
প্রথম বিশ্বযুদ্ধ। কামান দাগা গোলন্দাজ ও স্থলসেনার শক্তির পাশাপাশি নৌ সৈনিকদের রমরমা। আর এই যুদ্ধেই বিশ্ব প্রত্যক্ষ করছিল আকাশ দখলের ভিন্ন লড়াই। বলা যায় সেই শুরু রণকৌশলে এয়ারফোর্সের ভূমিকা।
১৯১৭ সালের ডিসেম্বর মাসে ইন্দ্রলাল রায় ফ্রান্সের পক্ষে সামরিক বিমান অভিযানে অংশ নেন। এই অভিযানে তাঁর বিমান ভেঙে পড়েছিল জার্মানির এয়ারফোর্সের হামলায়। জখম ইন্দ্রলাল রায় কে উদ্ধার করা হয়।কয়েকদিন পর সুস্থ হয়ে ফের তিনি আকাশ দখলে বিমান উড়িয়ে দিলেন।
১৯১৮ সালে ৬ জুলাই প্রথম বিশ্বযুদ্ধের অন্যতম দিন। দিনটি ইন্দ্রনাথ রায়ের কারণে বিখ্যাত। এই দিন তিনি ফের হামলা চালালেন জার্মানির সেনার উপরে। শুরু হলো মেঘের আড়ালে ইন্দ্রলালের নতুন ‘মেঘনাধ বধ’ কাব্য লেখার পালা। অভূতপূর্ব সেই আকাশযুদ্ধ বিশ্ব সমর ইতিহাসে লেখা রয়েছে। একা ইন্দ্রলাল রায় ধংস করেন ৯টি জার্মান যুদ্ধ বিমান। বিশ্বজুড়ে শোরগোল পড়ে গেল এই ঘটনায়।
মেঘনাধ কে বধ হতেই হবে। এই যেন ভবিতব্য।
প্রথম বিশ্বযুদ্ধের আরও এক ঐতিহাসিক দিন ১৮ জুলাই। আকাশ যুদ্ধের সৈনিক ইন্দ্রলালের বিমান শত্রুপক্ষের ব্যুহে পড়ে যায়। আর বেরিয়ে আসতে পারেননি তিনি। জার্মান হামলায় ভেঙে পড়ে তাঁর বিমান। ডানা ভাঙা শঙ্খচিলের মতো রক্তাক্ত ইন্দ্রলাল রায়কে যখন উদ্ধার করা হয়, তখন তিনি মৃত। অবশ্য তার আগে তিনিই তৈরি করে দিয়েছেন পরবর্তী ভারতীয় বায়ু সৈনিকদের পথ।