Kolkata-City of Joy: হাওড়া ব্রিজের ‘বড়দা’ শোনায় পুরনো শহরের গল্প

Kolkata: হাওড়া ব্রিজের থেকে বয়সে ১১ বছরের বড় নব্বইয়ের দোরগোড়ায়.. দাঁড়িয়ে নিশব্দ। গল্প শোনায় পুরোনো ব্রিজ। ২৯ ডিসেম্বর তার জন্মদিন। এক সময়ে নামডাক থাকলেও এখন…

Kolkata bally bridge

Kolkata: হাওড়া ব্রিজের থেকে বয়সে ১১ বছরের বড় নব্বইয়ের দোরগোড়ায়.. দাঁড়িয়ে নিশব্দ। গল্প শোনায় পুরোনো ব্রিজ।

২৯ ডিসেম্বর তার জন্মদিন। এক সময়ে নামডাক থাকলেও এখন বয়সের ভারে নুয়ে পড়া, ৯০ বছরের এই ‘বৃদ্ধ’ কার্যত নিঃসঙ্গ। আর তাই তার জন্মদিন পালন তো দূর, গায়ে জমে থাকা ময়লা সাফ করারও কাউকে পাওয়া যায় না বঞ্চনার শিকার এই বৃদ্ধের পরিচয় ‘ওয়েলিংডন ব্রিজ’, যাকে সকলে চেনেন বালি ব্রিজ নামে। বিদেশি নাম ছেড়ে এক সময়ে তার নাম রাখা হয়েছিল বিবেকানন্দ সেতু। ১৯৩১ সালে ২৯ ডিসেম্বর গঙ্গার উপরে উদ্বোধন হয়েছিল এই রেল ও সড়ক ব্রিজের।

ইতিহাস বলছে, গুজরাতের কচ্ছ এলাকার বাসিন্দা, রেলের ঠিকাদার ও ব্যবসায়ী রায়বাহাদুর জগমল রাজা এই সেতু তৈরির কাজ শুরু করেছিলেন ১৯২৬ সালে। এই কাজের জন্য কচ্ছ থেকে নিয়ে আসা হয়েছিল মিস্ত্রিদের। ব্রিজের ভিত তৈরি করতে গঙ্গার নীচে ১০০ ফুট গভীর পাতকুয়ো খোঁড়া হয়েছিল। তার উপরে স্তম্ভ বানিয়ে স্টিল ও কংক্রিট ব্যবহার করে রেল ও সড়ক ব্রিজটি তৈরি হয়। খরচ হয়েছিল প্রায় এক কোটি টাকা।

রাজ্যের অন্যতম প্রাচীন এই ব্রিজের নীচে রয়েছে ৭৭০ মিটার দৈর্ঘ্য ও সাড়ে ৮ মিটার প্রস্থের লোহার কাঠামো। ব্রিজের সাতটি স্তম্ভের উপর রয়েছে সাতটি এক্সপ্যানশন জয়েন্ট, আর তার উপর পাতা রয়েছে ঢেউ খেলানো ট্র্যাপ প্লেট। এর উপরেই কংক্রিট করা অংশ দিয়ে বালি ও দক্ষিণেশ্বরের মধ্যে গাড়ি চলাচল করে। দুই রাস্তার মাঝে রয়েছে শিয়ালদহ-ডানকুনি শাখার রেললাইন। ভারতীয় রেলের ইতিহাসেও এই ব্রিজের গুরুত্ব রয়েছে। জানা যায়, এই ব্রিজের উপর দিয়েই প্রথম বার হুগলি নদী পারাপার করেছিল ট্রেন— হাওড়া থেকে শিয়ালদহগামী জগমল রাজা হাওড়া এক্সপ্রেস।

বয়সের হিসেবে বালি ব্রিজ হাওড়া সেতুর থেকেও ১১ বছরের বড়। কিন্তু হাওড়া শহরের দুই প্রান্তে গঙ্গার উপরে থাকা এই দুই সেতুর রক্ষণাবেক্ষণে বিশাল বৈপরীত্য। প্রতি বছরই প্রতিষ্ঠা দিবসে এবং বছরের বিশেষ দিনে রঙিন আলোয় সেজে ওঠে হাওড়া সেতু। সেখানে বালি ব্রিজে অধিকাংশ দিন আলোই জ্বলে না। দীর্ঘ দিন ধরে এই আলোর সমস্যার সমাধানে পূর্ত দফতর এখন এলইডি আলো লাগালেও স্থানীয়দের অভিযোগ, মাঝেমধ্যেই বেশ কিছু আলো বন্ধ থাকে। আবার ব্রিজের রাস্তা খারাপ হয়ে গেলে তা কে সারাবে, তা নিয়ে রেল ও রাজ্যের চাপান-উতোরেই বছর ঘুরে যায়।

দুই সেতুর বৈপরীত্যের এখানেই শেষ নয়! গঙ্গায় ঝাঁপ দেওয়া রুখতে হাওড়া সেতুর রেলিংয়ের উপর লাগানো হচ্ছে লোহার তারের জাল, নজরদারির জন্য রয়েছে সিসি ক্যামেরা, পুলিশের ক্যাম্প, কলকাতা ও হাওড়া পুলিশের টহলদারি। পান-গুটখার পিক থেকে হাওড়া সেতুকে বাঁচাতেও তৎপর প্রশাসন। সেখানে বালি ব্রিজের দিন কাটে একা, অবহেলায়। স্থানীয় সূত্রের খবর, বালি ব্রিজের আইনশৃঙ্খলার দিকটা বালি ও বেলঘরিয়া, বরাহনগর থানা ভাগাভাগি করে দেখে। মেরামতির দায়িত্বও রেল ও পূর্ত দফতরের হাতে। কিন্তু তবু দিনের পর দিন চুরি হয়ে যাচ্ছে সেতুর মূল স্টিলের কাঠামো রক্ষা করার লোহার ঢাকনা। ফুটপাত থেকে শুরু করে ব্রিজের সর্বত্র পান-গুটখার পিকে রাঙানো। রেলিংয়ে জমে চাপ চাপ ধুলো। নেই সিসি ক্যামেরা, পুলিশের স্থায়ী ক্যাম্প। অরক্ষিত ব্রিজের রেলিং। ধুলোভর্তি গালিপিটের কারণে বর্ষায় জল থইথই করে ব্রিজের উপরে।

বালি ব্রিজের দুই প্রান্তে রয়েছে চারটি ঘর, তার পাশ দিয়ে নেমে গিয়েছে ব্রিজের নীচে যাওয়ার চারটি সিঁড়ি। স্থানীয়েরা জানাচ্ছেন, ব্রিজ তৈরির পরে ওই ঘর থেকেই টোল আদায় করা হত। কিন্তু রক্ষণাবেক্ষণের অভাবে সেই ঘর-সিঁড়ি সবই আজ ভগ্নপ্রায়। ঘরগুলির গায়ে ঝোপের আড়ালে আজ চাপা পড়ে রয়েছে ‘বৃদ্ধ সেতুর জন্মদিনের তারিখ ও ব্রিটিশদের দেওয়া নামের ফলক। ব্রিজের কাঠামোয় রায়বাহাদুর জগমল রাজার নামাঙ্কিত ফলকটিও আজ ধুলোয় চাপা পড়েছে। স্থানীয়েরা জানাচ্ছেন, ব্রিজের দু’পাশের ওই ঘরগুলি ব্যবহার করে অনায়াসেই রেস্তরাঁ থেকে পুলিশ ক্যাম্প— অনেক কিছুই তৈরি করা যেত। কিন্তু সে সবে কেউই উদ্যোগ দেখায়নি।