বিশেষ প্রতিবেদন: ওরা নৌকা করে চলেছেন শিকারে। সামনে শিকার আসতেই তাক করলেন বন্দুক, চলল গুলি। শব্দ করে ফেটে পড়ল বিশাল বিশাল বরফের টুকরো। মিশন সাকসেসফুল। অবাক হচ্ছেন? ভাবছেন শিকারটা করা হল কী ? হিমবাহ।
হ্যাঁ, ওরা পশু পাখি নয়। শিকার করেন হিমবাহ। গ্রিনল্যান্ডের কিছু মানুষ এটাই শিকার করেন। আরও অদ্ভুত বিষয় হল।এটাই ওঁদের পেশা। এমন শিকারের জন্যই স্থানীয় হিমবাহ শিকারিরা পাড়ি দেন প্রায় তিরিশ মাইল পথ।
এমন শিকারের কারণ কী? গ্রিনল্যান্ডে বিশাল বিশাল হিমবাহগুলির আনুমানিক বয়স কমপক্ষে ১০ হাজার বছর। এর মধ্যেই রয়েছে পরিবেশের বিশুদ্ধতম জল, গবেষকরা এমনটাই মনে করেন। পাশাপাশি গুণগত মানের কারণেও এই বরফের চাহিদাও আকাশছোঁয়া বাজারে, কারণ ওয়াইন থেকে শুরু করে প্রসাধনী দ্রব্য তৈরিতে ব্যবহৃত হয় এই বরফগলা জল। ব্যবহৃত হয় পানীয় জল হিসাবেও। গ্রিনল্যান্ডের স্থানীয় দোকানগুলিতে যার এক একটি বোতলের দাম ধার্য হয় প্রায় ১০ ডলার।
হিমবাহ শিকার বেশ শক্ত। সমুদ্রে ভাসমান থাকায়, বরফখণ্ডের উপরের অংশ লবণের সংস্পর্শে আসে। তাই শিকারের পরে ডিঙিতে তুলে অত্যন্ত সতর্কভাবে ব্রাশ করা হয় গোটা বরফখণ্ডটিকে। তারপর হাতুড়ি দিয়ে ছোট ছোট টুকরোয় ভেঙে সংরক্ষিত করা হয় ব্যারেলে। জানা গিয়েছে, এপ্রিল থেকে জুন মাসের মধ্যে প্রায় ৮ লক্ষ লিটার বরফ সংগৃহীত হয় গ্রিনল্যান্ড থেকে। বর্তমানে শুধু গ্রিনল্যান্ডই নয়, হিমবাহ-গলা জল সরবরাহিত হয় থাইল্যান্ড, ইউনাইটেড কিংডমে।
তবে ঘটনা হল অখণ্ড হিমবাহ ‘শিকার’ করে না শিকারিরা। শুধুমাত্র যে উষ্ণায়নের প্রভাবে হিমবাহ থেকে খসে পড়া খণ্ডগুলিই শিকার করা হয়। ওই বরফখন্ড আর্কটিক অঞ্চলের বাইরে চলে এলে লবণাক্ত জলে মিশে দ্রুত গলে যাওয়ার আগে তা শিকার করে নেন। পরিবেশবিদের বড় অংশই আবার এই কাজকে সমর্থন করেন না।