বিশেষ প্রতিবেদন: পুজোর সময় কোথাও একটু অফবিট ট্যুরে যেতে চাইছেন।।চলে যান সসারাম। কলকাতা থেকে দূরত্ব মাত্র ৫৫০ কিলোমিটার , ট্রেনে সময় লাগে প্রায় ৮ ঘন্টার কাছাকাছি ।
না কোন প্রসিদ্ধ টুরিস্ট স্পট এটি নয় । এটি বিহারের রোহতাস জেলার সাসারামের কিছু শহরকেন্দ্রিক ও শহর সংলগ্ন মনমুগ্ধকর স্থান ।
সাসারাম বিহারের এক লুকানো সম্পদ। এটা জলপ্রপাতের দেশ। শেরসাহের দেশ বললেও ভুল হয় না। চার চারটে প্রধান জলপ্রপাতের সাথে পরিচয় হবে । সীতাকুন্ড, মাঁঝেরকুন্ড, ধোঁয়াকুন্ড, আর তুতলা ভবানী জলপ্রপাত । আর জলপ্রপাত বলেই বর্ষামঙ্গল । বর্ষাতে নদীর জলে যৌবনে ভরপুর, ভয়ঙ্কর মনোরম সুন্দর । কিন্তু শীতে একদমই শুকনো, জলশূন্য । তাইতো বর্ষামঙ্গলের আদর্শ ঠিকানা বিহারের সাসারাম । বেশী দিনের ট্রিপ নয় । মিনিমাম দুদিন, ম্যাক্সিমাম তিনদিন (যাওয়া আসা নিয়ে) দিলেই আপনিও এই বর্ষামঙ্গলের শরিক হতে পারেন ।
প্রথমে আসি পাইলট বাবার মন্দির এবং ট্যুরিজম সেন্টারের কথায় । নতুন তৈরী হচ্ছে পাইলট বাবার আশ্রম মন্দির ট্যুরিজম । ২০১৩ থেকে কাজ শুরু হয়েছে । ২০২১ এ কমপ্লিট হবে । মূলত গুজরাতের সোমনাথ মন্দিরের আদলে তৈরী হচ্ছে । এছাড়া গৌতম বুদ্ধের মন্দির আর বিশালাকার শিব মূর্তি নিয়ে একটা জমজমাট প্যাকেজ হচ্ছে পাইলট বাবার আশ্রম মন্দির । সাসারাম ট্যুরিজম আসতে আসতে গড়ে উঠছে । এরপর চন্দনগিরি প্রাচীন শিব মন্দির এবং ত্রিনেত্র গুম্ফা । পাহাড়ের উপর এক প্রাচীন শিব মন্দির এবং পাহাড়ের মধ্যে এক গুহা – প্রকৃতির সৃষ্টি ।
এরপরই আসল সীতাকুন্ড, মাঁঝেরকুন্ড, ধোঁয়াকুন্ড অভিযান । স্টেশনের কাছ থেকেই একটা বড়ো গাড়ী সারাদিনের জন্য রিজার্ভ করে নিন । আমরা হয়তো সীতাকুন্ড, মাঁঝেরকুন্ড, ধোঁয়াকুণ্ডের নাম জানি না কিন্তু বিহারে সাসারাম এরিয়াতে এগুলো জনপ্রিয় পিকনিকের জায়গা । ছোটো গাড়ী, অটো নিয়ে কঠিন পাহাড়ী পথ যাওয়া সম্ভব নয় । বড়ো গাড়ীই ভরসা । আর দরকার একজন গাইডের । গাড়ীর ড্রাইভারই গাইডের কাজ করতে পারে ।
শুরু হলো পাহাড়ী রাস্তায় গাড়ী ওঠা । রাস্তার কথা যত কম বলা যায় তত ভালো । সীতাকুন্ড পর্যন্ত গাড়ী যায় । তারপর আর যাওয়ার উপায় নেই । গাইডের সাহায্যে পাহাড়ী পাথরের রাস্তা ধরে ট্রেক । ২ থেকে ৩ কিমির মধ্যেই তিনটে জলপ্রপাত । প্রথমেই সীতাকুন্ড । তারপর মাঁঝেরকুন্ড এবং শেষে ধোঁয়াকুন্ড । একই নদীর জল থেকে সৃষ্ট । এবং নিচে নেমেছে “কাই” নদী নামে । বর্ষাকালে জলে ভরপুর । দেখে মনে হবে কোনো এক বিদেশ । ভাষায় বর্ণনা দেওয়া বৃথা । ছবি আর ভিডিওতেই বোঝা যায় এর সৌন্দর্য্য । যার জন্য আমার মনে হয় দুদিন সংসার, অফিস ছেড়ে দেখে আসি এই অজানা লুকানো প্রকৃতিকে । এরপর ধোঁয়াকুন্ড । সবচেয়ে সুন্দর ।
স্নান করা যাবে সীতাকুন্ড আর মাঁঝেরকুণ্ডে । ধোঁয়াকুণ্ডে এতো উঁচু থেকে জলরাশি পড়ছে প্রবল বেগে স্নান করার কোনো সুযোগ নেই । কিন্তু সবচেয়ে সুন্দর এবং ভয়ংকর এই ধোঁয়াকুন্ড । দেখলেই মনে হবে আশা সার্থক।
এরপর চলুন ৫১ পীঠের এক পীঠ তাঁরা চন্ডী মন্দির দর্শনে । এখান থেকে গুপ্তধামও যাওয়া যায় । (এলবামে একটা ম্যাপও আছে তাঁরা চন্ডী মন্দির থেকে গুপ্তধাম যাওয়ার)৷
৫১ পীঠের এক পীঠ মা তাঁরাচন্ডী মন্দির দর্শন করে চলুন তুতলা ভবানী জলপ্রপাত দেখতে । পাশেই মা তুতলা ভবানী মন্দির । দুটো বড়ো বড়ো পাহাড়ের মাঁঝে জলরাশি বিপুল বেগে পড়ছে । এও এক সুন্দর জলপ্রপাত । সবশেষে সাসারাম শহরের মধ্যে শেরসাহের সমাধি সৌধ দর্শন। তখন সূর্য প্রায় অস্ত যাওয়ার পথে । এবার তো ফেরার পালা ।
রাতে ফেরার ট্রেন । কিন্তু উত্তর ভারতের ট্রেন লাইন তো । সব ট্রেনই চার পাঁচ ঘন্টা লেটে চলে । কিন্তু দুদিনের ট্রিপে (একদিন পুরো ঘোরা) যা দেখবেন সারা জীবন মনে থাকবে। চারটে জলপ্রপাত, একটা শক্তিপীঠ, এক সমাধি সৌধ কিম্বা নির্মীয়মান পাইলট বাবার ট্যুরিজম কেন্দ্র ইত্যাদি হাতে গোনা শুধুই সংখ্যা মাত্র । সীতাকুন্ড, মাঁঝেরকুন্ড, ধোঁয়াকুন্ড এবং তুতলা ভবানী স্মৃতিতে সারা জীবন থেকে যাবে । হয়তো আবার পরের বর্ষাতে আবার ছুটে যাবেন সাসারাম এই কুণ্ডের টানে।
কিভাবে যাবেন? হাওড়া থেকে দিল্লি, বেনারস, মোগলসরাই (ওল্ড নেম) গামী যেকোনো ট্রেন সাসারাম স্টেশনে দাঁড়ায় । ঘন্টা দশেক সময় নেয় । স্টেশনে নেমেই প্রচুর গাড়ী পাবেন । বড়ো গাড়ী বুক করবেন । ফেরার ট্রেন গড়ে চার/পাঁচ ঘন্টা লেট থাকবেই ।
কোথায় থাকবেন? সাসারাম স্টেশনের পাশেই অনেক হোটেল আছে । এসি রুম ও আছে । যোগাযোগ : ০৬১৮৪/২২১২৭৭ । এছাড়াও আরো অনেক হোটেল আছে।
কি কি দেখবেন: ১) সীতাকুন্ড জলপ্রপাত/২) মাঁঝেরকুন্ড জলপ্রপাত ৩) ধোঁয়াকুন্ড জলপ্রপাত ৪) তুতলা ভবানী জলপ্রপাত এবং মা তুতলেশরী মন্দির ৫) ৫১ পীঠের এক পীঠ তাঁরা চন্ডী মন্দির ৬) শেরশাহ সুরির সমাধি সৌধ
৭) পাইলট বাবার মন্দির আশ্রম ট্যুরিজম সেন্টার
৮) চন্দনগিরি পুরানো শিব মন্দির এবং ত্রিনেত্র গুম্ফা
এছাড়াও যেতে পারেন গুপ্তধাম এবং কাসিস জলপ্রপাত৷