তিমিরকান্তি পতি বাঁকুড়া: এ এক তাসের দেশ। তবে অন্য তাসের দেশ। আসলে ‘মন্দির-নগরী’ হিসেবেই খ্যাত বাঁকুড়ার (Bankura) বিষ্ণুপুর (Bishnupur)। এক সময়ের মল্ল রাজাদের রাজধানী প্রাচীন এই পৌর শহরের টেরাকোটার মন্দিরগুলি যেমন পর্যটকদের প্রধান আকর্ষণ, তেমনি বাংলার সুপ্রাচীন শিল্পকলার টানে এখানে ছুটে আসেন অসংখ্য মানুষ।
প্রাচীণ ঐতিহ্য আর পরম্পরা মেনে শহরের আজও বংশপরম্পরায় ‘দশাবতার’ (Dashabatar) তাস তৈরি করে আসছেন শহরের ফৌজদার পরিবার। মাঝে এই শিল্পে কিছুটা ভাটা দেখা গেলেও বর্তমান প্রজন্মের মধ্যে এবিষয়ে আগ্রহ বাড়ছে। সাধারণ তাসের সঙ্গে এই তাসের পার্থক্য অনেক। ৫২ নয়, এখানে দশাবতার তাসের সংখ্যা ১২০। আর এখানে মৎস্য, কূর্ম, বরাহ, নৃসিংহ, বামন, পরশুরাম, রাম, বলরাম, জগন্নাথ এবং কল্কি। বিষ্ণুর এই দশ অবতারের মূর্তি আঁকা থাকে তাসে। প্রত্যেক অবতারের জন্য নির্ধারিত ১২টি করে তাস। তার মধ্যে একটা রাজা ও একটি মন্ত্রী।
দশাবতারের বাকি দশটিতে থাকে অবতারের প্রহরণ বা জ্ঞাপক চিহ্ন। যেমন মৎস্য অবতারের মাছ, কূর্মর কচ্ছপ, বরাহের শঙ্খ, নৃসিংহের চক্র, বামনের হাঁড়ি, পরশুরামের টাঙ্গি, রামের বাণ, বলরামের গদা, জগন্নাথের পদ্ম এবং কল্কির তরবারি। প্রথম পাঁচ অবতার, অর্থাৎ মীন, কূর্ম, বরাহ, নৃসিংহ, বামন— এই পাঁচটি তাসের ক্রমপর্যায় হলো রাজা, মন্ত্রী, তার পর দশ, নয়, আটি অর্থাৎ আট, সাতি অর্থাৎ সাত ইত্যাদি। এক্কা (এক) সব চেয়ে ছোট। দশাবতার তাস পাঁচ জন মিলে খেলা যায়। তবে বর্তমান সময়ে এই তাস খেলার চেয়ে ঘর সাজানোর কাজেই মানুষ বেশি ব্যবহার করছেন।
এই দশাবতার তাস তৈরির সঙ্গে যুক্ত শিল্পী বাঁশরী ফৌজদার বলেন, তাঁদের পূর্বপুরুষরা মল্ল রাজার সেনাপ্রধান হিসেবে দক্ষতা অর্জন করায় ফৌজদার পদবী পান। সেই থেকেই তাঁর পরিবারের পদবী ফৌজদার। একই সঙ্গে রাজার নির্দেশেই এই তাস তাঁরা তৈরির কাজ শুরু করেন। সেই ধারাবাহিকতা এখনো চলছে।
বাঁশরী ফৌজদারের মেয়ে সুইটি ফৌজদার ইতিমধ্যে রাজ্যস্তরের কারুশিল্প প্রতিযোগিতায় শিল্প বিভাগে দ্বিতীয় স্থান অর্জন করেছেন। পড়াশুনা করেও চাকরী সন্ধান না মেলায় তিনি পারিবারিক এই পেশাতেই যোগ দিয়েছেন বলে জানান।