বাড়ছে জল: কলকাতার খাল পাড়ে কুমীর-বাঘের সহাবস্থান

বিশেষ প্রতিবেদন: খালের মধ্যে বর্জ্য, খাল পাড়ে দখলদারদের ভিড়। এর জেরে বাড়বে জল দূষণ। পাশাপাশি খারাপ অবস্থা হচ্ছে খাল ও নদীর। যার আরও খারাপ ফল…

Water pollution in kolkata

বিশেষ প্রতিবেদন: খালের মধ্যে বর্জ্য, খাল পাড়ে দখলদারদের ভিড়। এর জেরে বাড়বে জল দূষণ। পাশাপাশি খারাপ অবস্থা হচ্ছে খাল ও নদীর। যার আরও খারাপ ফল নদীর বহু ছোট নদীর মূল স্রোত হারিয়ে যাওয়া এবং ক্রমে নিকাশির অবস্থা খারাপ হয়ে যাওয়া সঙ্গে ও। এই পরিস্থিতিকে পরিবেশবিদ সুভাষ দত্ত বলছেন খাল কেটে কুমিরের পাশাপাশি বাঘকেও ডেকে আনছে মানুষ। পরিবেশের অশনি ঘন্টা বাজছে তীব্রভাবে।

কুমির বলতে পরিবেশবিদ বলেছেন শহরের খালে ক্রমাগত তরল ও কঠিন বর্জ্য নিক্ষেপ হওয়াকে। বাঘ, খাল এবং জলার দুপাশে লক্ষ লক্ষ দখলদার। পরিবেশবিদ বলেন, “আমরা বিপদকে আহ্বান করছি। পরিবেশ আদালতের নির্দেশে কয়েক সপ্তাহ আগে কেষ্টপুর ও বাগজোলা খালের হাল-হকিকৎ দেখতে বেরিয়েছিলাম। এর দূর্দশার বিবরণ দেওয়া আমার পক্ষে অসম্ভব। এককথায় আমার কাছে তা ছিল সত্যিই হৃদয়-বিদারক।”

তিনি আরও বলেন, ‘খালদুটোর দু-ধারে হাজার হাজার বেআইনি দখলদারি দেখে আদৌ অবাক হইনি, কেননা ৬ বছর আগেই আদিগঙ্গার পাড় দখল চাক্ষুষ করেছিলাম। চমকিত হলাম এখানে এর ব্যপকতাটা দেখে। স্থায়ী ও অস্থায়ী কাঠামো তৈরী করে খালের ধারেই কেবল নয়, জলের ওপরেও অসংখ্য নির্মাণে অবাধে চলছে ব্যবসা ও বসবাস। ঐ প্রান্তিক মানুষগুলোকে দেখে প্রথমেই ফ্ল্যাশ ব্যাকে আমার ছিন্নমূল হওয়া ছেলেবেলার বস্তিজীবনের কয়েকটা অধ্যায় মনে আসলো। এটা অনুভব করলাম যে আমি বা আমরা তখন ঢের ভালো ছিলাম। ঠিক বুঝে উঠতে পারিনি এই ছিন্নমূল মানুষগুলো কারা বা কোথা থেকে এসেছেন! “

Water pollution

পরিবেশবিদ জানিয়েছেন, ” কেন্দ্রীয় দূষণ নিয়ন্ত্রণ পর্ষদ মার্চ ২০২১ এ সারা ভারতে ট্রিটমেন্ট প্লাণ্টের কার্য্যকরণের ওপর একটা রিপোর্ট তৈরী করেছে, তাতে দেখা যাচ্ছে যে আমাদের রাজ্যে দৈনিক মোট ৫৪৫৭ মিলিয়ন লিটার তরল বর্জ্য তৈরী হয়, তার মধ্যে মাত্র ৩৩৭ মিলিয়ন লিটার শোধিত হচ্ছে। অর্থাৎ আমরা শতকরা প্রায় ৯৬ শতাংশ তরল বর্জ্য (মলমূত্র ও অন্যান্য) সরাসরি খাল-বিল-নদী-নালায় নিক্ষেপ করি। জলদূষণ এখন আমাদের দেশের ভূষণ। খাল-পাড়ের দখলদারেরাতো খাল ও জলাগুলোকে সরাসরি প্রক্ষালনে পরিণত করেছে, আর আমাদের মতন জিম্মাদারেরা পরোক্ষভাবে এগুলোকে প্রক্ষালন বানিয়েছে। তাই বাগজোলা ও কেষ্টপুর খালের ধারে এত দূর্গন্ধ পেয়েছিলাম যে আমার পূর্বজন্মের অন্নপ্রাশনের ভাতও প্রায় উঠে এসেছিলো।

শুধু তরল বর্জ্যই নয়- এত জঞ্জাল যে খাল দুটোতে কোথা থেকে আসে বা কিভাবেই তা প্রবাহিত হয় তা বুঝে উঠতেই পারলাম না। চলমান কঠিন বর্জ্যের এই প্রবাহের দৃশ্য সত্যিই বিরল। এখানেই শেষ নয় জাল বা দড়ি দিয়ে আটকে এই জঞ্জাল খাল থেকে তোলার প্রস্তুতিও কয়েক জায়গায় দেখলাম। খালে জঞ্জাল ফেলে সেগুলোকে ঠিকঠাক না রেখে, তা নোংরা করার পর পরিষ্কারের প্রয়াসটাকে অপপ্রয়াস ছাড়া আর কিই বা বলতে পারি?”

তিনি বলছেন, “রাজ্যে মোট কত খাল রয়েছে তার সঠিক সংখ্যা জানা নেই। শুধুমাত্র গঙ্গাতেই ১৩৮ টা খাল সংযোজিত রয়েছে বলে রিপোর্ট। নিজেদের বাড়ির টয়লেটগুলোকে সাফ-সুরত রেখে আমরা রাজ‍্যের সব খাল ও তৎসহ নদীগুলোকেই টয়লেট বানিয়ে ফেলেছি। একটা প্রশ্ন প্রায়ই ওঠে। কেন খাল ও জলাগুলোর আজ এই করুণ হাল? সরকার ও প্রশাসন করছেটা কি? আমি বলি ওঁরা ভোট ব্যাঙ্কের ফিক্সড ডিপোজিটটা অটুট রাখতেই কেবল আগ্রহী। অন্য কোন এজেন্ডা রাজনৈতিক নেতাদের কাছে নেই। খাল-বিল,জলা ও নদীগুলো আজ সেই কারণে অনাথ।”