ছেলের বিয়েতে ব্যান্ড পার্টিকে দিয়ে রবীন্দ্রসঙ্গীত বাজিয়েছিলেন গগণেন্দ্রনাথ

বিশেষ প্রতিবেদন: মারোয়ারি বিবাহে ব্যান্ড পার্টি বিভিন্ন গানের সুরে বরযাত্রীকে মনোরঞ্জন করতে দেখা যায়। কিন্তু কোনওদিন শুনেছেন হ্যারিসন রোডের ব্যান্ড পার্টিকে রবীন্দ্র সঙ্গীত বাজাতে। এমনটাই…

ganandra nath

বিশেষ প্রতিবেদন: মারোয়ারি বিবাহে ব্যান্ড পার্টি বিভিন্ন গানের সুরে বরযাত্রীকে মনোরঞ্জন করতে দেখা যায়। কিন্তু কোনওদিন শুনেছেন হ্যারিসন রোডের ব্যান্ড পার্টিকে রবীন্দ্র সঙ্গীত বাজাতে। এমনটাই করেছিলেন গগণেন্দ্রনাথ ঠাকুর। তাও বাজনাদার কারা? বৃটিশ দল।

বড় ছেলের বিয়ে। সাহেব বাজনদারদের ব্যান্ড পার্টিকে ডেকে আনলেন গগণেন্দ্রনাথ ঠাকুর। বাজাতে বলেছিলেন রবীন্দ্রসঙ্গীত। ঘটনা ১৯০৪ সালের। গগণেন্দ্রনাথের বড় ছেলে গেহেন্দ্রনাথের বিয়ে, অনেক দিন পর রমরমা করে বিয়ে হচ্ছে গগনেন্দ্রনাথের পরিবারে। কারণ গগন ঠাকুরের বোন বিনয়িনী দেবীর বিয়ের পার্টিতে মারা যান বাবা গুণেন্দ্রনাথ। অতিরিক্ত মদ্যপান থেকে মৃত্যু হয় তাঁর। বাবার মৃত্যুর পর শুরু হয় অর্থাভাব। গগণেন্দ্রনাথ সহ তার অন্যান্য ভাই বোনেদের বিয়ে নমো নমো করেই দেন মা সৌদামিনি দেবী। তাই নিজের ছেলের বিয়ে ধুমধাম করে দিতে চেয়েছিলেন গগণেন্দ্রনাথ ঠাকুর।।

পরিচারককে দেওয়া হয় দামি শাল। মেয়ের বাড়িতে রুপোর থালায় তত্ত্ব হিসাবে দেওয়ায়। গগনেন্দ্রনাথ নিজে। বিয়েতে লোবো সাহেবের ব্যান্ডপার্টি বাজিয়েছিল রবীন্দ্রনাথের দুটি গান— ‘শান্ত হ রে মম চিত্ত নিরাকুল’ এবং ‘শান্তি করো বরিষন’। দুটি গান সাহেবদের বাজানোর জন্য হারমোনাইজ় করে দিয়েছিলেন স্বয়ং ইন্দিরা দেবী। সম্ভবত সেই প্রথম কোনও সাহেবি বাজনদার বিয়েবাড়ির ব্যান্ডে রবীন্দ্রসঙ্গীতের সুর বেজেছিল।

তবে দুঃখ পিছু ছাড়েনি। বিয়ের এক বছর পরই মারা যান গেহেন্দ্রনাথ। শোক সামলাতে সময় লেগেছিল গগন ঠাকুরের। শোকগ্রস্ত শিল্পী আরও গভীর ভাবে ডুবে গিয়েছিলেন রং-তুলির জগতে।

আধুনিক চিত্রকলার ক্ষেত্রে কালি-তুলি কাজের পথিকৃৎ গগনেন্দ্রনাথ কেবল একজন চিত্রকরই ছিলেন না, দেশীয় ঐতিহ্য অনুসরণে আসবাবপত্রের নকশা অঙ্কনে তাঁর মৌলিকতা এবং অভ্যন্তরীণ গৃহসজ্জার ক্ষেত্রে অগ্রণী ভূমিকার কথা অনস্বীকার্য। বিংশ শতকের প্রথম দিকে স্বদেশী আন্দোলনে অনুপ্রাণিত হয়ে তিনি প্রিন্স দ্বারকানাথ ঠাকুরের সময় থেকে সংরক্ষিত পাশ্চাত্য রীতির বিলাসবহুল ফুলদানি ও ভিক্টোরীয় আমলের আসবাবপত্র জোড়াসাঁকোর পৈতৃক বাড়ি থেকে সরিয়ে নেন। স্বদেশজাত দ্রব্যসম্ভারের পুনরুদ্ভাবনে তিনি বিশেষ অবদান রাখেন। বাংলার কুটির শিল্পকে জনপ্রিয় করে তোলার কাজে তিনি প্রয়াসী হন এবং ১৯১৬ সালে বাংলার তৎকালীন গভর্নর লর্ড কারমাইকেল-এর পৃষ্ঠপোষকতায় বাংলার গৃহনির্মিত কারুশিল্পের প্রচারার্থে স্থাপিত ‘বেঙ্গল হোম ইন্ডাস্ট্রিজ অ্যাসোসিয়েশন’-এর অন্যতম সচিব হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন।

অভিনয়কলাতেও গগনেন্দ্রনাথের দক্ষতা ছিল। তিনি জোড়াসাঁকোর বিচিত্রা হলে রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের ফাল্গুনী (১৯১৬) নাটক মঞ্চস্থ করেন এবং স্বয়ং রাজার ভূমিকায় অভিনয় করেন। অ্যানী বেস্যান্ট তাঁর অভিনয়ের ভূয়সী প্রশংসা করেন। ঋণশোধ-শারদোৎসব অভিনয়ে (১৯২২) সম্রাট বিজয়াদিত্যের ভূমিকায় এবং বৈকুণ্ঠের খাতার অভিনয়ে বৈকুণ্ঠ চরিত্রে তিনি কৃতিত্বের সঙ্গে রূপদান করেন।