নিউজ ডেস্ক: উত্তর প্রদেশের মথুরা সীমান্তে আছনেরা জেলার আগ্রার ছোট্ট গ্রাম রায়পুরা আহির। এই গ্রামের বীরেন্দ্র সিংয়ের পরিবারের সব থেকে বড় লড়াই ছিল প্রতিকূলতার মধ্যেও বেঁচে থাকা৷ কঠোর পরিশ্রমের মধ্যে শিক্ষা লাভ এবং সাফল্য পাওয়ার বড় উদাহরণ হয়ে দাঁড়াল এই পরিবার৷ শৈশবে বাবাকে হারানো পাঁচজন প্রকৃত ভাই-বোন উত্তরপ্রদেশ পুলিশের কনস্টেবল হল৷ তারমধ্যে চারজনই মেয়ে৷
ইউপির কয়েকটি পরিবারের মধ্যে এমন একটি পরিবার, যাদের শিশুরা চরম দারিদ্র্য দেখেছে৷ তারপরেও দিনরাত কঠোর পরিশ্রম করেছে। দেখেছে সাফল্যের মুখ৷ একে অপরকে অনুসরণ করে চার বোন এবং এক ভাই ইউপি পুলিশে যোগ দিয়েছেন। এই বোনদের মধ্যে একজন এখন অবশ্য পুলিশ কনস্টেবল পদ থেকে পদত্যাগ করেছেন৷ পুলিশের চাকরি ছেড়ে শিক্ষকতা করছেন৷
ইউপি পুলিশ কনস্টেবল ভাইবোনদের বড় বোন সুনীতা সংবাদমাধ্যমের সঙ্গে কথপোকথনে জানিয়েছেন, তাঁর পরিবারের কঠিন সংগ্রাম এবং তাঁর ভাই-বোনদের সাফল্যের পুরো গল্প বর্ণনা৷ যা অনেকের জন্য অনুপ্রেরণাদায়ক৷ যাদের ছোটবেলাতেই পিতৃহারা হতে হয়েছে এবং কঠোর পরিশ্রম করার পরিবর্তে, তারা ভাগ্যকে অভিশাপ দিতে থাকে।
সুনীতা কনস্টেবল, পুলিশ লাইন বেরেলি
এই পুলিশ কনস্টেবল ভাইবোনদের মধ্যে বড়৷ সুনিতা ২০১৬ সালে ইউপি কনস্টেবল নিয়োগ পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হয়েছিল। বিবিএ পর্যন্ত শিক্ষা গ্রহণ করা সুনীতা অতীতে বেরেলি জেলার কিলা থানায় কর্মরত৷ এখনও বরেলি পুলিশ লাইন্সে কর্মরত।
রঞ্জিতা: প্রথমে কনস্টেবল, এখন শিক্ষক
দ্বিতীয় বোন রঞ্জিতা৷ বিএড এবং বিএসসি ডিগ্রি পেয়েছেন৷ তাঁর দুই ছোট বোন কুন্তি এবং অঞ্জলির সঙ্গে ২০১৯ সালের ইউপি পুলিশ কনস্টেবল নিয়োগ পরীক্ষায় পাস করেন। রঞ্জিতা ইউপির মালওয়া থানায় পোস্টিং পেয়েছিলেন। পুলিশ কনস্টেবল হওয়ার পরও তিনি প্রতিযোগিতামূলক পরীক্ষার প্রস্তুতি অব্যাহত রাখেন। সম্প্রতি তিনি শিক্ষক নিয়োগে নির্বাচিত হন এবং পুলিশ কনস্টেবল থেকে পদত্যাগ করেন। বর্তমানে শিক্ষক প্রশিক্ষণ নিচ্ছেন।
অঞ্জলি এবং কুন্তী কনস্টেবল, হুসাইনগঞ্জ
তৃতীয় ও চতুর্থ বোন অঞ্জলি এবং কুন্তীও৷ তাঁরাও বড় বোনের পদাঙ্ক অনুসরণ করে ২০১৯ সালের ইউপি পুলিশ কনস্টেবল নিয়োগ পরীক্ষা পাস করেছে। অঞ্জলি ইন্টার এবং কুন্তী বিএ প্রথম বর্ষ পর্যন্ত পড়াশোনা করেছেন৷ এই দুই বোনই বর্তমানে ফতেহপুর জেলার হুসাইনগঞ্জ থানায় কর্মরত। এটি তাঁদের প্রথম পোস্টিং।
ধীরাজ পিএসি’তে প্রশিক্ষণরত
চার বোন ছাড়াও সম্প্রতি তাঁদের ভাই ধীরাজও সফল হয়েছে। তিনি পিএসি’তে কনস্টেবল পদে নির্বাচিত হয়েছেন। বর্তমানে তিনি পিএসিতে প্রশিক্ষণ নিচ্ছেন। ধীরজ বিএ দ্বিতীয় বর্ষে পড়াশোনার সময়ই এই সাফল্য পেয়েছেন৷
বড় বোন সুনীতা জানান, ২০০২ সালে একটি সড়ক দুর্ঘটনায় তাঁদের বাবা মারা যান৷ তাঁর মৃত্যুর খবরও এক সপ্তাহ পরে তাঁদের পরিবার পেয়েছিল। দুর্ঘটনার পরিচয় না পাওয়ার পর পুলিশ তাঁদের বাবার মৃতদেহ দাহ করেছিল। এরপর সংবাদপত্রে প্রকাশিত সংবাদের ভিত্তিতে পরিবার তাকে পোশাকের মাধ্যমে চিহ্নিত করে৷।
স্বামীর মৃত্যুর পর মা মছলা দেবী সাত সন্তানের দেখাশোনা করেন। স্বামীর মৃত্যুর সময় ছোট মেয়ে অঞ্জলির বয়স ছিল মাত্র ১০ মাস। সুনীতার বয়স ছিল আট বছর, রঞ্জিতা ছয় বছর, কুন্তী দুই বছর, ধীরজ চার বছর, দ্বিতীয় ভাই সুধীর কুমারের বয়স ছিল ১৪ বছর। বড় বোন শশীর বিয়ে দিয়েছিলেন তাঁদের বাবা৷
সুনীতা জানান, তাঁদের কিছু জমি আছে। এছাড়াও তাঁর বাবার মৃত্যুর পর তারা মহিষ পালন শুরু করেন। গবাদি পশু এবং কৃষিকাজের মাধ্যমে মাছলা দেবী সব ছেলেমেয়ে পড়াশোনা করিয়েছেন৷ প্রত্যেকই সফল করেছেন৷ সুনীতা এবং তাঁর বোনরা তাঁদের মাকে সবচেয়ে বড় শক্তি বলে মনে করেন৷