প্রোটিয়ার্সদের বিরুদ্ধে বাইশ গজের লড়াইয়ের আগে টিম ইন্ডিয়ার ঘরোয়া বিবাদ প্রকাশ্যে

Sports desk: সাড়ে চার বছর পর বিগত টি টোয়েন্টি বিশ্বকাপে টিম ইন্ডিয়ার স্কোয়াডে এসে নিজের পারফরম্যান্স জোরে সকলকে তাক লাগিয়ে দেন স্পিনার রবিচন্দ্রন অশ্বিন। “ক্রিকেটের…

Ashwin and Ravi Shastri

Sports desk: সাড়ে চার বছর পর বিগত টি টোয়েন্টি বিশ্বকাপে টিম ইন্ডিয়ার স্কোয়াডে এসে নিজের পারফরম্যান্স জোরে সকলকে তাক লাগিয়ে দেন স্পিনার রবিচন্দ্রন অশ্বিন। “ক্রিকেটের ভগবান” সচীন তেন্ডুলকর বিশ্বকাপে অশ্বিনের ডেলিভারিতে নতুনত্ব’র ছোঁয়া দেখে ভূয়সী প্রশংসায় পঞ্চমুখ হতে দেখা গিয়েছে। নিজের আন্তজার্তিক ক্রিকেট কেরিয়ারের ব্যাডপ্যাচ নিয়ে ইতিমধ্যেই “বিস্ফোরক স্বীকারোক্তি”তে চাঞ্চল্য ছড়িয়েছেন ভারতের অভিঞ্জ স্পিনার রবিচন্দ্রন অশ্বিন।এবার প্রাক্তন ভারতীয় ক্রিকেট দলের হেডকোচ রবি শাস্ত্রীকে নিয়েও বোমা ফাটালেন অশ্বিন।

রবি শাস্ত্রীকে নিয়ে অশ্বিনের বোমা’র তীব্রতায় ভারতীয় ক্রিকেট মহল এখন উথালপাতাল। বিস্ফোরক রবিচন্দ্রন অশ্বিন রবি শাস্ত্রীকে নিয়ে বিস্ফোরক প্রতিক্রিয়ায় বলেন,প্রাক্তন হেডকোচ রবি শাস্ত্রীর মন্তব্যের পরে এবং কীভাবে তিনি তার কেরিয়ারে কঠিন সময়ের মুখোমুখি হয়েছিলেন, তারপরে ঘূর্ণিঝড়ের মাঝখানে তিনি বাদ বোধ করেছিলেন। অনেকবার খেলাকে বিদায় বলার কথাও ভেবেছিলেন।

প্রসঙ্গত, অস্ট্রেলিয়ার বিরুদ্ধে ২০১৯’এ সিডনি টেস্টে পাঁচ উইকেট নেওয়ার পরে তৎকালীন হেডকোচ রবি শাস্ত্রী কুলদীপ যাদবকে বিদেশে ভারতের টপ স্পিনার হিসাবে নাম করেছিলেন।

এই প্রসঙ্গে এক সাক্ষাৎকারে অশ্বিন রবি শাস্ত্রীকে নিশানা করে বিস্ফোরক ঢঙে বলেন, তিনি কুলদীপের জন্য সত্যিই খুশি ছিলেন কারণ তিনি জানতেন অস্ট্রেলিয়ায় স্পিনার হিসাবে পাঁচ উইকেট নেওয়া কতটা কঠিন ছিল কিন্তু শাস্ত্রীর মন্তব্য তাকে ‘সম্পূর্ণ হতাশ’ করে দিয়েছে।

প্রাক্তন ভারতীয় ক্রিকেট দলের হেডকোচ শাস্ত্রীর মন্তব্য প্রসঙ্গে অশ্বিন আরও বলেন, “রবি ভাইয়ের প্রতি আমার অনেক শ্রদ্ধা আছে, আমরা সবাই করি এবং আমি মনে করি আমরা সবকিছু বলার পরেও আমাদের কথা ফিরিয়ে নিতে পারি। তখন অবশ্য আমি খুব বিষণ্ণ বোধ করছিলাম। সম্পূর্ণ ভেঙে পড়েছিলাম”।

অকপট এবং খোলা মনের মানুষ তথা ভারতের অভিজ্ঞ স্পিনার এই প্রসঙ্গে এও বলেন, “আমরা সবাই কথা বলি যে আমাদের সতীর্থদের সাফল্য উপভোগ করা কতটা গুরুত্বপূর্ণ। আমি কুলদীপের জন্য খুশি, আমি অস্ট্রেলিয়ায় পাঁচ উইকেট পাইনি কিন্তু, পেয়েছে(কুলদীপ যাদব)। আমি জানি এটা কত বড় অর্জন। এমনকি যখন আমি ভাল বোলিং করেছি, আমি এই কৃতিত্ব অর্জন করতে পারিনি, তাই আমি তার জন্য সত্যিই খুশি। আর অস্ট্রেলিয়ায় জয়টা খুবই আনন্দের উপলক্ষ”।

অশ্বিন বলেন, “আমি যদি তার সুখ এবং দলের সাফল্যের ভাগীদার হতে চাই, তাহলে আমার মনে হওয়া উচিত যে আমি এর অংশ। আমি যদি মনে করি যে আমাকে অপমান করা হচ্ছে, তাহলে আমি কীভাবে একটি দল বা সতীর্থের সাফল্য উপভোগ করতে নিজেকে ওপরে তুলতে পারি?”

অশ্বিন অবশ্য ভারতীয় দলের ঐতিহাসিক সিরিজ জয়ের পর আয়োজিত পার্টিতে যোগ দেন। এই পার্টিতে যোগ দেওয়ার প্রেক্ষাপট নিয়ে বলতে গিয়ে অকপট ভঙ্গিতে অশ্বিন বলেন, “ম্যাচের পর আমি আমার রুমে ফিরে গিয়েছিলাম এবং তারপর আমার স্ত্রীর সাথে কথা বলেছিলাম, আমি আমার ব্যক্তিগত হতাশা পিছনে ফেলে যেতে পেরেছি। আমি ওই দলের অংশ হয়েছিলাম কারণ আমরা বড় সিরিজ জিতেছি”।

ওই সিরিজের প্রথম টেস্ট ম্যাচের কথা উল্লেখ করে ৩৫ বছর বয়সী রবিচন্দ্রন অশ্বিন বলেন, বারবার ইনজুরির কারণে তিনি “অনেক ব্যথা নিয়ে” খেলছেন এবং তিনি উভয় ইনিংসে তিনটি করে উইকেট নিয়ে দলের জয়ে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছিলেন। এমন পারফরম্যান্সের পরেও শাস্ত্রীর মন্তব্য অশ্বিনের কাছে প্রতিক্রিয়া, হতাশাজনক।

প্রসঙ্গক্রমে অশ্বিন বলেন, ‘প্রথম টেস্ট এখনও আমার স্মৃতিতে আছে। প্রথম ইনিংসে আমরা কম স্কোরে অলআউট হয়েছিলাম। এরপর প্রথম চার উইকেটের মধ্যে তিনটি নিয়েছিলাম। এবং তারপর চতুর্থ ইনিংসে যখন পিচ সম্পূর্ণ সমতল ছিল, আমি গুরুতর চোটের পরেও ৫০ ওভারের বেশি বল করেছি এবং তিনটি উইকেট নিয়েছিলাম”। তিনি এও বলেন, “আমি বিশ্বাস করতাম যে আমি অসহ্য যন্ত্রণার মধ্যে দলের জন্য ভালো কিছু করেছি, কিন্তু আমি শুনতে পেলাম ‘নাথান লিয়ন ছয় উইকেট এবং অশ্বিন তিনটি’।

ওই সময়ে আন্তজার্তিক ক্রিকেটে নিজের ব্যাডপ্যাচের প্রসঙ্গ টেনে অশ্বিন বোমা ফাটাতে গিয়ে বলেন, “আমি ইতিমধ্যেই আমার চোটের কারণে হতাশ ছিলাম কারণ আমি বোলিং’র দিক থেকে ভাল ছন্দে ছিলাম না। এই সময়ে আমি কারো সাথে কোন তুলনা চাইনি কিন্তু ওই প্রতিক্রিয়ার পর (লিওনের সাথে তুলনা করুন) এবং তারপর সিডনি মনে হলো আমি দলের জন্য কোন ভূমিকা পালন করিনি”।

অশ্বিন বিস্ফোরক স্বীকারোক্তিতে বলেন,”২০১৮ এবং ২০২০ এর মধ্যে, আমি বেশ কয়েকবার গেমটি ছেড়ে দেওয়ার চিন্তা করেছি। আমি অনেক চেষ্টা করেছি, কিন্তু সবকিছু ঠিকঠাক হচ্ছিল না। চোটের পর যত বেশি চেষ্টা করেছি, ফলাফল তত খারাপ হয়েছে”।

অশ্বিন স্বীকারোক্তিতে বলেন, “বিশেষত চোট পাওয়ার পর, আমি ছয় বল করার পর হাঁফিয়ে উঠতাম এবং সারা শরীরে ব্যথা অনুভব করতাম। তাই ওভারের প্রতিটি বলের পর আমি মানিয়ে নিতাম। কখনো কখনো ছোট লাফ দিয়ে বল করতাম আবার কখনো ক্রিজের কোণ থেকে কিন্তু যখন কাজ হতো না, তখন ভাবতাম বিরতি নেওয়া উচিত”। নিজের আক্ষেপ গোপন না রেখে অশ্বিনের প্রতিক্রিয়া,” বিদেশ সফরে চোট পেয়ে ক্রিকেট মহলে সহানুভূতি প্রকাশ না করায় হতাশাও ছিল তার মধ্যে”।

ভারতীয় স্পিনার রবিচন্দ্রন অশ্বিন দেশে এবং বিদেশে ভারতের সেরা বোলার। আন্তজার্তিক ক্রিকেটে এখন পর্যন্ত অশ্বিন ৪২৭ টি টেস্ট উইকেট নিয়েছেন। অনিল কুম্বলে এবং কপিল দেবের পর লাল বলের ফর্ম্যাটে দেশের তৃতীয় সর্বোচ্চ উইকেট শিকারী তিনি।

প্রসঙ্গত, টেস্ট ক্রিকেটে শ্রীলঙ্কার স্পিনার মুত্থাইয়া মুরলিধরন সর্বোচ্চ উইকেট শিকারী। টেস্টে ৮০০ উইকেট নিয়েছেন মুরলিধরন। মুরলিধরনের এই রেকর্ডের ধারেকাছে কোনও বোলার নেই। নিজের চোট আঘাত প্রসঙ্গে অশ্বিন আগেই স্বীকার করে বলেছেন,”মুরলিধরনের সাথে কথোপকথন করতে পেরে আমি নিজেকে ভাগ্যবান মনে করি। আমি যখন ইনজুরিতে পড়েছিলাম, তিনি আমাকে ডেকেছিলেন এবং আমাকে এই ধরনের আঘাত এড়াতে পরামর্শ দেন।