ভোটার তালিকা পরিষ্কার করতে আধার এবং ভোটার আইডি সংযুক্তির ঘোষণা নির্বাচন কমিশনের

ভোটার আইডি কার্ড দ্রুত আধার কার্ডের সঙ্গে যুক্ত হবে, এমন আশাবাদ প্রকাশ করেছে নির্বাচন কমিশন। আগামী ১৮ মার্চ নির্বাচন কমিশন কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্র সচিব, আইন মন্ত্রণালয়ের…

The pre-poll schedule was announced on Monday amid the complexity of the sand bill!

ভোটার আইডি কার্ড দ্রুত আধার কার্ডের সঙ্গে যুক্ত হবে, এমন আশাবাদ প্রকাশ করেছে নির্বাচন কমিশন। আগামী ১৮ মার্চ নির্বাচন কমিশন কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্র সচিব, আইন মন্ত্রণালয়ের সচিব এবং ইউআইডিএআই-এর সিইও-এর সঙ্গে একটি বৈঠক করতে যাচ্ছে, যেখানে ভোটার আইডি এবং আধার সংযুক্তি নিয়ে আলোচনা হবে। বিশেষত তৃণমূল কংগ্রেস পশ্চিমবঙ্গে ভোটার আইডিতে যত্রতত্র ডুপ্লিকেট এন্ট্রি নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করার পর এই আলোচনা আরও গুরুত্ব পেয়েছে। নির্বাচন কমিশন ইতিমধ্যে ঘোষণা করেছে যে আগামী তিন মাসের মধ্যে ভোটার তালিকা থেকে ডুপ্লিকেট এন্ট্রি মুছে ফেলা হবে।

২০২১ সালের ডিসেম্বরে লোকসভা নির্বাচন আইন (সংশোধনী) বিল পাশ হওয়ার পর ভোটার আইডি আধারের সঙ্গে যুক্ত করার প্রস্তাব ছিল। নির্বাচন কমিশনের মতে, বর্তমানে ৬৪ কোটি ভোটার তাদের ভোটার আইডি আধারের সঙ্গে সংযুক্ত করেছে, আর দেশের মোট ভোটারের সংখ্যা প্রায় ৯৭ কোটি।

এটি কেন প্রয়োজন?
সরকার জানিয়েছে যে আধার ও ভোটার আইডি সংযুক্তি একটি প্রক্রিয়াধীন পদক্ষেপ, এবং এই প্রস্তাবিত সংযোগের জন্য কোনও নির্দিষ্ট লক্ষ্য বা সময়সীমা নির্ধারণ করা হয়নি। তাছাড়া, যাদের আধার তথ্য ভোটার তালিকায় সংযুক্ত করা হয়নি, তাদের নাম ভোটার তালিকা থেকে মুছে ফেলা হবে না। এর মূল উদ্দেশ্য হলো ভোটার তালিকা থেকে ভুয়া নামগুলো মুছে ফেলা এবং তালিকাকে পরিচ্ছন্ন রাখা। এর জন্য ভোটার আইডি এবং আধার সংযোগ বাধ্যতামূলক নয়।

এই সংযুক্তি ভোটার তালিকায় ভুয়া ভোটিং এবং ডুপ্লিকেট ভোটিং বন্ধ করতে সাহায্য করবে। এর মাধ্যমে একটি ব্যক্তির একাধিক জায়গায় ভোট দেওয়ার সম্ভাবনা বন্ধ হবে। এছাড়া, ডুপ্লিকেট নামগুলো ভোটার তালিকা থেকে মুছে ফেলার ফলে নির্বাচন প্রক্রিয়া আরও স্বচ্ছ হবে। এই প্রক্রিয়ায় যারা ডুপ্লিকেট ভোটার আইডি কার্ড ধারণ করছেন, তাদের তিন মাসের মধ্যে নতুন ইপিআইসি (EPIC) নম্বর দেওয়া হবে।

ভোটার আইডি এবং আধার সংযুক্তির সুবিধা:
ভারতের নির্বাচনী প্রক্রিয়া আরও স্বচ্ছ এবং সুষ্ঠু করার জন্য ভোটার আইডি এবং আধারের সংযোগ সহায়ক হবে। অনেক সময় দেখা যায়, এক ব্যক্তির নামের উপর একাধিক ভোটার আইডি কার্ড ইস্যু করা হয়, যা মানুষকে একাধিকবার ভোট দেওয়ার সুযোগ করে দেয়। আধার সংযুক্তির মাধ্যমে, প্রতিটি ব্যক্তির জন্য একটি ইউনিক আইডেন্টিটি প্রতিষ্ঠিত হবে, যা একে অপরের নামের উপরে একাধিক ভোটার আইডি ইস্যু করার সম্ভাবনা দূর করবে।

অনেক সময় ভোটার তালিকায় মৃত ব্যক্তিদের নাম বা অযোগ্য নাগরিকদের নাম থাকে, যা ভুয়া ভোটিংয়ের সম্ভাবনা তৈরি করে। যখন ভোটার আইডি আধারের সঙ্গে সংযুক্ত হবে, তখন এমন অবৈধ নামগুলো চিহ্নিত করা এবং মুছে ফেলা সহজ হবে। এর ফলে শুধু প্রকৃত ও যোগ্য ভোটাররা ভোট দিতে পারবেন।

আধার সংযুক্তির মাধ্যমে ভুয়া ভোটিং (বোগাস ভোটিং) রোধ করাও সম্ভব হবে। কারণ, ভোটার আইডির আধার কার্ডের বায়োমেট্রিক ডেটা (ফিঙ্গারপ্রিন্ট এবং আইরিস স্ক্যান) ব্যবহার করে ভবিষ্যতে ভোটারের পরিচয় নিশ্চিত করা যাবে, যা বোগাস ভোটিংয়ের সম্ভাবনা প্রায় সম্পূর্ণরূপে নির্মূল করবে।

আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ সুবিধা হলো, একাধিক রাজ্যে ভোট দেওয়া বন্ধ হবে। অনেক সময় মানুষ একাধিক রাজ্যে অন্তর্ভুক্ত হয়ে ভোট দেয়, কিন্তু আধার সংযুক্তির মাধ্যমে এটি শনাক্ত করা সহজ হবে এবং এমন অস্বাভাবিকতা রোধ করা যাবে।

ডুপ্লিকেট এবং ভুয়া নামগুলো ভোটার তালিকা থেকে মুছে ফেলার মাধ্যমে নির্বাচন প্রক্রিয়া আরও নির্ভরযোগ্য ও সুষ্ঠু হবে এবং গণতন্ত্র শক্তিশালী হবে।

গোপনীয়তা নিয়ে উদ্বেগ:
তবে, কিছু বিশেষজ্ঞ এবং রাজনৈতিক দল গোপনীয়তা সম্পর্কিত উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন। তারা দাবি করেছেন যে ভোটার আইডির সঙ্গে আধার সংযুক্তি করা হলে, ব্যক্তিগত তথ্য ফাঁস হতে পারে। সরকার এই প্রক্রিয়া বাস্তবায়ন করতে গিয়ে ডেটা সুরক্ষা এবং গোপনীয়তার বিষয়গুলোর প্রতি নজর রাখতে হবে, যাতে ভোটারদের তথ্য নিরাপদ থাকে।

২০২১ সালে, লোকপ্রতিনিধি আইন, ১৯৫১-এ সংশোধনী আনার পর, ভোটার আইডি কার্ড বা ইপিআইসি (Electors Photo Identity Card) সঙ্গে আধার কার্ড সংযুক্তির অনুমতি দেওয়া হয়েছিল। এরপর ২০২২ সালে নির্বাচন কমিশন ভোটারদের থেকে আধার নম্বর সংগ্রহ শুরু করে, তবে এটি স্বেচ্ছিক ছিল। এই নম্বর সংগ্রহের উদ্দেশ্য ছিল ভোটার তালিকায় ডুপ্লিকেট নিবন্ধন শনাক্ত করতে সাহায্য করা। তবে, ভোটারদের জন্য আধার-ইপিআইসি সংযুক্তি বাধ্যতামূলক হয়নি।

এই উদ্যোগটি নির্বাচন প্রক্রিয়াকে আরও স্বচ্ছ, সুষ্ঠু এবং নির্ভরযোগ্য করার পথে একটি গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ।