<

FPI আউটফ্লো অব্যাহত, ভারতীয় শেয়ারবাজারে উদ্বেগ

মার্চ মাসের প্রথম সপ্তাহে বিদেশি পোর্টফোলিও বিনিয়োগকারীরা (FPIs) আবারও ভারতীয় শেয়ারবাজার থেকে তাদের বিনিয়োগ তুলে নিয়েছে। অফিসিয়াল ডিপোজিটরি ডেটা অনুযায়ী, ৭ই মার্চ পর্যন্ত, ভারতীয় শেয়ারবাজার…

ekolkata24-latest bengali news

মার্চ মাসের প্রথম সপ্তাহে বিদেশি পোর্টফোলিও বিনিয়োগকারীরা (FPIs) আবারও ভারতীয় শেয়ারবাজার থেকে তাদের বিনিয়োগ তুলে নিয়েছে। অফিসিয়াল ডিপোজিটরি ডেটা অনুযায়ী, ৭ই মার্চ পর্যন্ত, ভারতীয় শেয়ারবাজার থেকে ২৪,৭৫৩ কোটি টাকা মূল্যমানের শেয়ার বিক্রি করেছে বিদেশি বিনিয়োগকারীরা। এই আউটফ্লোর প্রধান কারণ হিসেবে বিশ্বব্যাপী বাণিজ্যিক উত্তেজনা এবং দুর্বল কর্পোরেট আয় উঠে এসেছে।

এই একই সময়ে, বিদেশি বিনিয়োগকারীরা ২,৪০৫ কোটি টাকা মূল্যের ঋণ সাধারণ সীমাতে বিনিয়োগ করেছে এবং ঋণ স্বেচ্ছাসেবী রিটেনশন রুট থেকে ৩৭৭ কোটি টাকা তুলে নিয়েছে। ফেব্রুয়ারি মাসে ৩৪,৫৭৪ কোটি টাকা এবং জানুয়ারিতে ৭৮,০২৭ কোটি টাকা বেরিয়ে যাওয়ার পর, মার্চেও আউটফ্লো অব্যাহত রয়েছে।

এই আউটফ্লো মূলত বিশ্ববাজারের অস্থিরতা এবং ভারতের অভ্যন্তরীণ দুর্বল অর্থনৈতিক পরিস্থিতির কারণে হয়েছে। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, বিশ্বব্যাপী বাণিজ্য যুদ্ধের কারণে বিনিয়োগকারীদের মনোভাব নেতিবাচক হয়ে পড়েছে। তিনি আরও বলেন, “মেক্সিকো, কানাডা, চীনসহ বিভিন্ন দেশ থেকে আমদানির উপর যুক্তরাষ্ট্রের বাড়ানো শুল্ক এবং পাল্টা শুল্ক ভারতের জন্যও একটি বড় উদ্বেগের বিষয় হয়ে দাঁড়িয়েছে,” বলেছেন হিমাংশু শ্রীবাস্তব, অ্যাসোসিয়েট ডিরেক্টর- ম্যানেজার রিসার্চ, মর্নিংস্টার ইনভেস্টমেন্ট।

বিশ্বের অন্যান্য দেশের তুলনায় ভারতও এই শুল্ক বৃদ্ধির প্রভাবে পড়েছে, যা বিনিয়োগকারীদের ভারতীয় শেয়ারবাজার থেকে পুঁজি তুলে নেওয়ার প্রক্রিয়া ত্বরান্বিত করেছে।

এছাড়া, কর্পোরেট আয়ের দুর্বলতা বিনিয়োগকারীদের মনোভাব আরও খারাপ করেছে। অনেক সংস্থা তাদের চতুর্থ প্রান্তিকের ফলাফল উত্সাহজনক করতে পারেনি, যা বিনিয়োগকারীদের প্রত্যাশা পূরণ করতে ব্যর্থ হয়েছে। এর ফলস্বরূপ, বিদেশি পোর্টফোলিও বিনিয়োগকারীরা আরো সাবধানী পদক্ষেপ গ্রহণ করছে এবং শেয়ারবাজার থেকে তাদের বিনিয়োগ তুলে নিচ্ছে।

ডেজারভের কো-ফাউন্ডার বৈভব পরওয়াল বলেন, “রুপির অবমূল্যায়নও বিদেশি বিনিয়োগকারীদের জন্য লাভের হার কমিয়ে দিয়েছে। এর ফলে তাদের বিনিয়োগের প্রকৃত মূল্য কমে গেছে, যা তাদের আরও বিক্রি করার দিকে ঠেলে দিয়েছে।” ২০২৩ সালে, ভারতীয় অর্থনীতির শক্তিশালী প্রবৃদ্ধি নিয়ে বিদেশি বিনিয়োগকারীরা আশাবাদী হয়ে ১.৭১ লক্ষ কোটি টাকা বিনিয়োগ করেছিলেন। কিন্তু ২০২২ সালে, বৈশ্বিক কেন্দ্রীয় ব্যাংকগুলো সুদের হার বাড়ানোর ফলে বিদেশি বিনিয়োগকারীরা ১.২১ লক্ষ কোটি টাকা প্রত্যাহার করেছিলেন।

অবশ্যই, এই আউটফ্লো ভারতের শেয়ারবাজারের জন্য একটি বড় চ্যালেঞ্জ। তবে বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন, যদি বিশ্বব্যাপী বাণিজ্য উত্তেজনা এবং ভারতীয় মুদ্রা অবমূল্যায়নের পরিস্থিতি স্থিতিশীল হয় এবং কর্পোরেট আয় শক্তিশালী হয়, তবে শেয়ারবাজারে প্রবাহ আবারও ফিরে আসতে পারে। ভারতের অর্থনৈতিক অবস্থাও যদি আরও সুসংহত হয়, তবে বিদেশি বিনিয়োগকারীরা শেয়ারবাজারে ফের বিনিয়োগ করতে আগ্রহী হতে পারে।

সর্বশেষে, শ্রীবাস্তব আরও বলেন, “আমরা আশা করি যে ভারতের কর্পোরেট আয় এবং সামগ্রিক অর্থনৈতিক পরিস্থিতি কিছু সময় পরে আরও শক্তিশালী হবে, যা বিদেশি বিনিয়োগকারীদের আবার বাজারে ফিরে আসতে উৎসাহিত করবে।”

এই সময়ে, ভারতীয় শেয়ারবাজারে বিদেশি পোর্টফোলিও বিনিয়োগকারীদের পুঁজি সঞ্চয়ের গতিরোধ করার জন্য সরকার এবং সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের তরফ থেকে সঠিক পদক্ষেপ নেওয়া অত্যন্ত জরুরি।