Depression: দু পেগ মেরে দিলে উবে যায় না অবসাদ

News Desk: পৃথিবীতে ৫% মানুষ ডিপ্রেশান (Depression) বা অবসাদের শিকার। ডিপ্রেশান থেকে মানুষ আত্মহত্যা পর্যন্ত করে। এই ডিপ্রেশান বা অবসাদ দুপেগ মেরে দিলে, বা বন্ধুদের…

Depression

News Desk: পৃথিবীতে ৫% মানুষ ডিপ্রেশান (Depression) বা অবসাদের শিকার। ডিপ্রেশান থেকে মানুষ আত্মহত্যা পর্যন্ত করে। এই ডিপ্রেশান বা অবসাদ দুপেগ মেরে দিলে, বা বন্ধুদের সাথে দীঘা বেড়াতে গেলে সেরে যায়না। ডিপ্রেশান অন্যান্য শারীরিক রোগের মতই বিশেষজ্ঞের পরামর্শ লাগে।

গত বছর সুশান্ত সিংহের ঘটনার পর সারা ফেসবুকে লাখো লাখো স্বঘোষিত মনোরোগ বিশেষজ্ঞর দেখা পাওয়া গিয়েছিল, তাঁদের ধারণা ছিল, তাঁদের সাথে কথা বললেই তাঁদের ফেসবুক বন্ধু বা এমনি বন্ধুদের ডিপ্রেশান সেরে যাবে।

ডিপ্রেশন কেন হয়?
ডিপ্রেশন হওয়ার কারণ আকাশের তারার সমান৷ আমরা জানি যে মানুষের মগজ পৃথিবীর সবথেকে জটিল জিনিস৷ তাই তার একটা খুব কমন অসুখেরও এক দুটো কারণ হবে না তা স্বাভাবিক৷

১) বায়োলজিকাল কারণে ডিপ্রেশন সবথেকে বেশি হয়৷ জিন, হর্মোন, মগজের বিভিন্ন সাবস্ট্যান্সের অ্যাবনর্মালিটি মূলত দায়ী হয় ডিপ্রেশনের জন্য৷ মানে, আপনি পেইন্টার হতে চান, কবি হতে চান, পাইলট হতে চান বা এই ধরণের চিরাচরিত প্রফেশনের (ডাক্তার, ইঞ্জিনিয়ার, সরকারি কেরানি) বাইরে গিয়েও কিছু হতে চান এবং আপনার পরিবার মেনেও নিয়েছে তবু আপনার ডিপ্রেশন হতে পারে৷ আপনি নিজের কাজে সফল, আপনি প্যাশন ফলো করে সাকসেসও পেয়েছেন, সব আছে আপনার৷ তবু আপনার ডিপ্রেশন হতে পারে৷ ঋত্বিক রোশনের (শাহরুখের নাম নেব না, ও হুদাই ভালো আছে এখন) ডিপ্রেশন হতে পারে, সব থাকা স্বত্ত্বেও৷ (গুগুল করুন, ঋত্ত্বিক রোশন সত্যিই ডিপ্রেশনে ভুগেছেন।) কারণ, সেই বায়োলজি৷

২) বায়োলজিকালি আপনার কোনও সমস্যা নেই, তাও আপনার ডিপ্রেশন হতে পারে৷ ছোটবেলার কোনও ইন্সিডেন্ট, পারিপার্শ্বিক সমস্যা, বুলিং, যা চেয়েছেন তা পাননি, প্রেম-ভালবাসা, বন্ধুবিচ্ছেদ, কেরিয়ারে চাপ, ষড়যন্ত্রের শিকার ইত্যাদি বহু জিনিস আপনাকে ডিপ্রেশনে ফেলতে পারে৷

৩) কেউ জানে না৷ হ্যাঁ ঠিক, কেউ জানে না কেন আপনি অবসাদে ভুগছেন, এমনও হয়৷ আপনার জিনে ডিপ্রেশন নেই৷ আপনার সমস্ত হর্মোন ঠিকঠাক ক্ষরিত হয়৷ আপনার লাইফ একদম অন ট্র‍্যাক, তবুও আপনার ডিপ্রেশন হয়েছে, এমনও হয়৷ প্রথমেই বলেছি, মানুষের মস্তিষ্ক সবথেকে জটিল জিনিস৷

মনখারাপ ও ডিপ্রেশনঃ কবিতায় যাবেন না৷ একদম যাবেন না৷ মনখারাপ আর ডিপ্রেশন এক নয়৷ দরকার হলে হাতের লেখা প্র‍্যাকটিসের মতো বার বার লিখুন, এ দুটো এক নয়৷ হেল এন্ড হেভেন পার্থক্য৷ মনখারাপ আমাদের পার্টিকুলার কোনও কারণে সাময়িক ভাবে হয়৷ সাময়িক মানে এই নয় কিন্তু যে দেড় ঘণ্টার৷ মনখারাপ দেড় বছরও থাকতে পারে৷ কিন্তু তাকে ডিপ্রেশন দাগিয়ে দেওয়া যায় না৷ মনখারাপ আমাদের মানসিক অবস্থার একটা পার্ট৷ আমরা খুশি থাকি, আনন্দে থাকি, ব্যাজার থাকি বা না থাকি, ‘এই তো চলছে’ টাইপ৷ এর বাদ দিয়েও মনখারাপ হয়৷ বন্ধু ধোঁকা দিলে, অ্যাচিভমেন্ট না হলে, প্রেম কেটে গেলে৷ এগুলো লাইফের অংশ৷ জিন্দেগী এক রঙ্গমঞ্চ হেয়, হাম কাঠপুতলিয়া হেয়৷ তার সঙ্গে ডিপ্রেশনের সম্পর্ক নেই৷ মনখারাপ ভালো৷ মনখারাপ হওয়া দরকারও৷ মনখারাপ না হলে আমরা বুঝব কী করে, যে কী করলে মন ভালো হবে৷ ‘সব পেয়েছির দেশে’ কেউ ভালো থাকে না৷ কিছু পেতে গেলে খাটনি লাগে এবং ধৈর্য্য লাগে৷ তবে না ভালোর স্বাদ পাবো৷

ওদিকে ডিপ্রেশন আলাদা জিনিস৷ তার কোনও ডেফিনেশন নেই৷ সব পেয়েও লোকে বিষণ্ণ থাকে৷ আবার কিছু না পেয়েও একই কষ্টে থাকে৷ তার মানে কিচ্ছু না পাওয়া সব লোক কি ডিপ্রেসড? একদমই নয়৷ বহু লোক কিচ্ছু না পেয়েও হেব্বি ভালো থাকে৷ বিশ্বাস না হলে আপনার নিকটবর্তী বাসস্ট্যান্ডে যান একবার রাত একটায়৷ সমাজের প্রান্তিক মানুষদের মস্তি দেখতে পাবেন৷ তাই দয়া করে কবির কথায় মনখারাপ আর ডিপ্রেশন গোলাবেন না৷
কীভাবে বুঝবেন আপনার ডিপ্রেশন হয়েছে?

ডিপ্রেশন মানসিক হলেও এর সিম্পটম একদমই শারীরিক৷ একটা উদাহরণ দিই৷ ধরুন কাল আপনার পরীক্ষা৷ আপনার মনখারাপ খুব৷ সে প্রেমিক ছেড়ে যাক বা প্রিয় বান্ধবী মুখ করুক৷ আপনি স্টুডিয়াস হলে কোনওদিন পড়াশুনো থামাবেন না৷ কিন্তু ডিপ্রেশন হলে? আপনার শরীর দেবে না৷ পাহাড়প্রমাণ ক্লান্তি আপনার শরীরে জাঁকিয়ে বসবে৷ আপনি টপ করা ছাড়া বোঝেন না কিছু৷ তবুও ডিপ্রেশন আপনাকে বইয়ের পাতা উল্টাতে দেবে না৷ একদম পেটখারাপের মতো৷ মনখারাপ আপনাকে পড়তে দেবে চাপ খেলে (বাবা মায়ের রাগী মুখ চোখের সামনে ভেসে ওঠে)৷ পেটখারাপ হলে আপনাকে বাথরুমেই কাটাতে হবে৷ কোনও দ্বিতীয় রাস্তা নেই৷ সে বাবা-মা যতই ‘বেরো রে এবার, কমোড জ্যাম হয়ে যাবে তো’ বললেও৷

ডিপ্রেশন হলে বুঝবেন কীভাবে?
যতই আমরা অঙ্ককে গালাগাল দিই, জীবন অঙ্ক মেনেই চলে৷ আমাদের ফুসকুড়ি হলে বোরোলিন লাগাই, গোড়ালি ফাটলে ক্র‍্যাকক্রিম৷ ঠিক তেমনভাবেই আমাদের মগজও চলে৷ যখন দেখবেন আপনার মানসিক সমস্যার কোনও কারণ নেই, থাকলেও তা ওভারকাম করার আপনার ক্ষমতা নেই, কিছুতেই বাস্তব পরিস্থিতি ২+২= ৪ হচ্ছে না, বুঝে নিন যে আপনার কাব্যিক বা পাতি মনখারাপ হয়নি৷ বুঝুন যে এটা স্বাভাবিক নয়৷
কী করতে হবে?

এমন একটা রোগ, না জানাটাই স্বাভাবিক৷ আপনার বন্ধুও চায় আপনি ভালো থাকুন৷ কেন আড্ডায় আসছেন না, বিনা কারণে মুখ ব্যাজার করে আছেন, এটা তাকে কষ্ট দিচ্ছে৷ (শুধু বন্ধু নয়, ফ্যামিলিও হতে পারে, বাবা মা’ও) সে বা তারা কিছু না জেনে চেষ্টা করছে আপনাকে ঠিক করার৷ পারবে না৷ আপনাকে ঠিক করার একটাই উপায়…

কী করবেন?
না, দীঘা ঘুরতে গিয়ে আপনি ঠিক হবেন না৷ কাছের মানুষের কাছে আপনার কান্না ঢেলে দিলেও হবেন না৷ কিছুটা শান্তি পেতে পারেন এসব করলে, তবে সেটা পার্মানেন্ট নয়৷ পরিবারের সঙ্গে কোয়ালিটি টাইম কাটালেও নয়৷ ওসবে মনখারাপ কাটে৷ ডিপ্রেশন নয়৷ আপনি মনে করেন, এসসেল ওয়ার্ল্ডে গেলে আপনার উদুরী সেরে যাবে? নয় তো? সেম কেস৷ সাইকোলজিস্ট বা সায়কায়াট্রিস্ট৷ সাধারণত বায়লজিকাল কারণ না হলে স্পিচ থেরাপিতেই আপনি সেরে যাবেন (ম্যান্ডেটরি নয়, ওষুধ লাগতে পারে), তবে বায়োলজিকাল কারণ হলে আপনার ওষুধ লাগবেই৷