🚨 Breaking: Welcome to Kolkata24x7 — fast, modern news theme…
Leaderboard Ad (728x90)

মুঠো ভরা ধান, উৎসবে মাতলেন বাংলার চাষিরা

By Kolkata24x7 Desk | Published: November 22, 2021, 5:48 pm
nabanna
Ad Slot Below Image (728x90)

বিশেষ প্রতিবেদন: মুষ্টি সংক্রান্তিতে মাতল গ্রাম বাংলা। চাষীর ঘরে মুঠ আনা এক মজার অনুষ্ঠান। ভোরবেলায় চাষী স্নান করে নতুন কাপড়-চোপড় পরে কাস্তে নিয়ে মাঠে হাজির। জমির ঈশাণ কোণে আড়াই আলুই ধান আড়াই প্যাঁচে কেটে ছালের কাপড় জড়িয়ে মাথায় নিয়ে চুপটি করে সোজা বাড়ি। লক্ষ্মীর আটনের পাশে কলাবউয়ের মতো রেখে দিয়ে শুরু হয় পুজো-আচ্চা। পূর্ববঙ্গে ভিন্ন রীতি। বাতা গাছের পাঁচটা ডগি আর মাঙ্গলিক উপচার নিয়ে ধানী জমিতে গিয়ে বাতার ডগায় সিঁদূর মাখায়। পাঁচটা ধানের ছড়া তাতে বেঁধে নিয়ে লক্ষ্মীর সঙ্গে পুজো আরম্ভ হয়ে যায় ঘটা করে। ময়মনসিংহ গীতিকার মলুয়া পালায় আছে। “পাঞ্চগাছি বাতার ডুগুল হাতেতে লইয়া। ধানের গাড়ি মাঠ থেকে ঘরমুখো মাঠের মাঝে যায় বিনোদ বারোমাস্যা গাহিয়া।।”

বস্তুতঃ একটা সময় এই মুঠ আনার মধ্য দিয়েই গ্রাম বাঙলায় আনুষ্ঠানিকভাবে শুরু হতো ধান কাটা। নতুন ফসল ওঠার মাস হিসেবে অগ্রহায়ণ দিয়েই শুরু হতো বছর গণনা। কালের বিবর্তনে নিয়ম বদলেছে, তবে প্রথা কিছু রয়ে গেছে। ভেতো বাঙালীর কাছে ধান শুধু আহার্যবস্তুই নয়। অর্থনীতি থেকে শুরু করে লোক উৎসব – কৃষ্টি তথা লোকসংস্কৃতির বারো আনাই ধান কেন্দ্রিক। ফলনে পিছিয়ে পড়লে কি হবে আজও কুলীন সেই আমন ধান। আষাঢ় থেকে পৌষ মাস – আমন ধানচর্যার যেন মহাকাব্যিক বিস্তৃতি।

অঘ্রাণের আরম্ভ। মাঠে মাঠে বেলা কাটে সকাল হতে সন্ধে। শুরু হয়েছে ধান কাটার মরশুম। মুনিশে আর মেশিনে মাঠ ছয়লাপ। নাস্তাপানি খাওয়া-দাওয়া সবই মাঠে-ঘাটে। মুর্শিদাবাদ, দুমকা, দূর-দূরান্তের গরিব-গুর্বো লোকজন। জন-মজুর খাটতে এসেছে পশ্চিমবঙ্গের ধান্যগোলা খ্যাত বর্দ্ধমান (বর্তমান পূর্ব বর্দ্ধমান) জেলার গাঁ-গঞ্জে। এখানকার লোকেরা বলে বিদেশী মুনিশ। পরিযায়ী পাখির মতো দুদ্দার ভিড় করে বছরে দুবার। ধান লাগানো আর এই ধান কাটায়। রুইতে যেমন সরেস তেমনি পাই মানে লাইন খাড়া করে দ্রুত গতিতে ধান কাটতেও ওস্তাদ। কথা বলে সুরেলা গলায়। তবে ধান এঁটুতে (আঁঠি বাঁধতে) আবার ততটাই অষ্টরম্ভা! ঢিপ দেওয়া, পালা বাঁধা – বিঁড়ে সাজানোয় এ অঞ্চলের মুনিশরা এক একজন সহজ শিল্পী। এক পর (প্রহর) রাত থাকতে মাঠ উঠেছে জেগে। খাটো দিনের বেলা। দুপুরের আজান শুনেই কর্মবিরতি। বেলা ঢলতেই দিগন্তে কুয়াশার সঙ্গে আঁধার নামে গুটি গুটি পায়ে। জনহীন প্রান্তরে একলা পড়ে থাকে মাঠের সোনালি শস্য – ধান!

nabanna

গ্রাম বাংলার মানুষের কাছে ধান সাক্ষাৎ লক্ষ্মী ঠাকরুন। জুতো পায়ে বা আকাছা হয়ে ধানে হাত-পা ঠেকানো একেবারেই বারণ। পৌষ মাসে রাত-বিরেতে টাকা-পয়সা ধার দেওয়া বা নেওয়া সর্বৈব নিষিদ্ধ। কিংবা জোরে শব্দ করলে গেরস্থরা রেগে টঙ। কারণ লক্ষ্মী বড়ো পয়মন্ত শান্ত দেবী। বেশী গোলমাল হলেই তিনি টুকুস করে কেটে পড়েন। আর সেই স্থান দখল করবেন রুক্ষকেশী অলক্ষ্মী! ধান-চালের সঙ্গে বঙ্গবাসীর সম্পর্ক কী আজকের? সিন্ধু সভ্যতার সমকালীন হলো আমাদের বর্দ্ধমানের পান্ডুরাজার ঢিবি। প্রত্ন-উৎখননে সর্বনিম্ন স্তর থেকে বেরিয়ে এসেছে ধানচাষের প্রত্ন নিদর্শন। তারপর যতদিন গেছে ধানের সঙ্গে বাঙালীর মন প্রাণ মান গেছে জড়িয়ে। ধান শুধু বাঙালিকে ধনবানই করেনি; দিয়েছে সম্মান। চাষীর কাছে ধানী জমি জোয়ান ব্যাটার সমান। বাংলাদেশের বগুড়া জেলার মহাস্থান থেকে প্রাপ্ত মৌর্য আমলের এক শিলালিপি। এতে খোদিত রাষ্ট্রীয় উদ্যোগে গড়ে ওঠা ধান্যভান্ডারের কথা।

লক্ষণ সেনের আনুলিয়া, তর্পণদিঘি, গোবিন্দপুর, শক্তিপুর তাম্রশাসনগুলির মঙ্গলাচারণ শ্লোকে গাঁথা ধান্যবন্দনার কথিকা। উদাহরণ বাড়িয়ে লাভ নেই। বোঝা যায় প্রাচীনকাল থেকেই রাষ্ট্রীয় অর্থনীতির মূল চালিকা শক্তি ছিল ধান। আজও তার খুব একটা পরিবর্তন হয়নি।

বোরো ধান বাজার মাত করলে কি হবে আমনের কাছে আমলই পায় নি কোনদিন। ধান কেন্দ্রিক লোকসংস্কৃতি আর যাবতীয় লোকউৎসব আমনকে কেন্দ্র করেই। রামাইপন্ডিতের শূণ্যপুরাণ নাকি চর্যাপদের সমসাময়িক রচনা। এতে হরেক রকম আমন ধানের কথা আছে যেমন কনকচূড়, কাঙুদ, কলমা, কসুমশালী, খিরখম্বা, গোতমপলাল, ঝিঙাশাল, সীতাশালী, লাউশালী, মুক্তাহার, মৌকলস, গৃহিনী পাগল, ইত্যাদি। এখন অবশ্যি সে-সবের পাট নেই। আগে গোবিন্দভোগ ধানের মাঠে ভুর ভুর করে সুগন্ধ ছড়াতো হেমন্তের বাতাস। এখন সবই খরানির ধান। যেমন ফলন তেমনি অর্থকরী। তবে কুলীন সেই আমন ধানই। আষাঢ় মাসে মিগের বাত আর অম্বুবাচীর উৎসবে টানা বর্ষণে জল লেগে যায় জমিতে। নবোদ্যমে আজ হাসিম শেখ আর রামা কৈবর্তের দল আর অস্থি চর্মসার বলদ ও ভোঁতা হাল নিয়ে আচোট জমিতে নাঙল ঠ্যালতে যায় না। বরং ভাড়া করা কিংবা কেনা ট্রাক্টর দিয়ে জমি চাষ দেওয়ায়। মাটির তলা থেকে এখনো বেরিয়ে আসে ঘুমন্ত গেঁড়ি গুগলি শামুক। ভিড় করে সাদা বকের দল। তবে চাষীরা আর আপন মনে দরাজ গলায় মাঠাল গানে ভরিয়ে দেয়না বর্ষণ সিক্ত আষাঢ়ের মাঠ-ঘাট… নাগর কোথায় রইল্যা রে… জল লেগেছে তোমার বাকুড়িতে।।

শাওন মাসের রিমিঝিমি বরিষণে ধান্যসুন্দরীরা গায়ে গতরে বেড়ে ওঠে। আসে তাদের নবযৌবন। ধান্যবতীরা হয়ে ওঠে গর্ভবতী। ধীরে ধীরে বিয়েন ছাড়ে। থোড় আসে। আর জমে ওঠে দুধ। আশ্বিনসংক্রান্তি হলো ধানের পূর্ণ প্রসব কাল। তারপরই পেকে ওঠার সময়। ধানিজমি যেন কৃষিলক্ষ্মীর আদিগন্ত সবুজ শাড়ি। লেগেছে তাতে সোনার পরশ। ধানের বনে হিমেল হাওয়া আর সোনা রোদের মাখামাখি, মাতামাতি। পরম তৃপ্তিতে পেকে উঠেছে আগুন রঙা ধান।অঘ্রান মাস পড়তে না পড়তে মাঠের রঙ বদলাতে শুরু করে। আগুন রঙা ধান ক্রমশ পাকা সোনায় পরিণত। উদ্ধত ঋজু ধান এবার সকল অহংকার লুপ্ত করে ফলভারে নত। শুরু হলো ধান কাটা। এবার লঘু অর্থাৎ নতুন ধান্যে হবে নবান্ন গ্রাম বাঙলার বাড়িতে বাড়িতে।

[custom_poll]
In-Article Ad (Responsive)
Ad Slot End of Article (728x90)

Related Articles