Special Correspondent, Kolkata: তিনি মৃত্যুর দূতকে আসতে দেখেছিলেন। সে আসছিল দূর সাগর পার হতে। তাঁর অসীম ক্ষমতা। চাইলেই পারতেন দূতকে ফেরত পাঠাতে। কিন্তু তিনি তা করলেন না। তাঁর অন্যতম প্রিয় ভক্ত ভগিনী নিবেদিতাকে বলে পাড়ি গিয়েছিলেন মহাপ্রয়াণের পথে। নিবেদিতা সেই মুহূর্তে কিছুই বুঝতে পারেন নি। বুঝেছিলেন স্বামীজির মৃত্যু সংবাদ আসার পর।
ঘটনা ১৯০২ সালের ২ জুলাই। স্বামীজির মৃত্যুর দুই দিন আগের ঘটনা। নিবেদিতাকে নেমন্তন্ন করলেন বিবেকানন্দ। নিমন্ত্রণ রক্ষা করতে বেলুর মঠে এলেন নিবেদিতা। সেদিন আবার স্বামীজির একাদশী। উপোস তাঁর। নিজে খাবেন না কিন্তু ভগিনীকে নিমন্ত্রণ করেছেন। বেজায় অস্বস্তিকর পরিস্থিতির মধ্যে পড়েছেন নিবেদিতা। স্বামীজির নিমন্ত্রণ হ্যাঁ না কিছুই বলতে পারেন না।
এরপরের ঘটনা আরও চমকপ্রদ। নিবেদিতাকে খাওয়ালেন ভাত,আলুসিদ্ধ,দুধ,কাঁঠাল। খাওয়ায় মন নেই নিবেদিতার। তিনি বুঝতেই পারছেন না কি করতে চাইছেন স্বামীজি। প্রথমে খানিক না না করেও শেষে খাওয়া শুরু করলেন। খাওয়ার সময় নানারকম কথা বলতে শুরু করলেন স্বামীজি। খাওয়া শেষ হল। এবার নিবেদিতার হাত পা জল দিয়ে ধুয়ে দিলেন। নিবেদিতা এবারেও অস্বস্তিতে। একেবারেই বুঝতে পারছেন না বিবেকানন্দ কি করছেন আর কেনই বা এমন করছেন।
স্বামীজি হাত যখন নিবেদিতার পা যত্ন সহকারে ধুয়ে দিচ্ছে আর থাকতে পারেননি নিবেদিতা। প্রতিবাদ করে বলেন, “এ কী করলেন আপনি, এ তো আমার করা উচিত আপনাকে।” বিবেকানন্দের উত্তর , “তুমি তো যীশুর কথা পড়েছ। তাহলে নিশ্চয় জানো তিনিও শিষ্যদের পা ধুয়ে দিয়েছিলেন।” নিবেদিতা বলে ছিলেন, “সে তো তাঁর মৃত্যুর কিছুদিন আগে।” বিবেকানন্দের সহস্য উত্তর, “you silly girl”। ভগিনী নিবেদিতা গুরুর কথা পুরো বুঝে উঠতে পারেননি।
৫ জুলাই ১৯০২ সকালবেলা বেলুরমঠেরই এক সাধক এসে একটি চিঠি দেন নিবেদিতাকে। চিঠি পাঠিয়েছেন স্বামী সারদানন্দ। বার্তা? স্বামীজির মহাপ্রয়াণের। ৪ তারিখ রাত ৯.১০ ধরাধাম ছেড়ে চলে গিয়েছে স্বামীজির দেহ। শিষ্যা অবাক। তিনি তখন অন্য কথা ভাবছেন। না দিন দুই স্বামীজির তাঁর পদ সেবা করার কথা নয়। তিনি উত্তর খুঁজছিলেন, ৪ তারিখ ৯.১০মিনিটে কেন তিনি স্বপ্নে দেখলেন শ্রীশ্রী রামকৃষ্ণ পরমহংস দেবের শরীর দ্বিতীয়বার চলে যাচ্ছে ধরাধাম ছেড়ে। সেটাই কি তবে স্বামীজির তাঁকে দেওয়া দ্বিতীয় মৃত্যু বার্তা ছিল!
স্বামী অভেদানন্দকে অবশ্য স্বামীজি তাঁর মৃত্যুর বছর পাঁচ ছয়েক আগে এমনই এক বার্তা দিয়েছিলেন। হঠাৎ করেই একদিন স্বামীজি তাঁকে বলেন, “আমি আর বছর পাঁচ ছয়েক বাঁচবো বুঝলে।” অভেদানন্দ স্বামীজির এমন কথায় বেশ বিরক্ত। স্বামীজির উত্তর, “তুমি বুঝবে না হে , তুমি বুঝবে না। আমার আত্মা দিন দিন বড় হয়ে যাচ্ছে। এত বড় হয়ে যাচ্ছে যে তা আর আমার এই শরীরের মধ্যে তাকে ধরে রাখা যাচ্ছে না। খালি ছেড়ে পালাতে চাইছে।