🚨 Breaking: Welcome to Kolkata24x7 — fast, modern news theme…
Leaderboard Ad (728x90)

Allauddin Khan: সুরের টানে আলাউদ্দিন যেতেন শিব মন্দির, ঘর ছাড়েন সুর সাধনায় শাস্তি পেয়ে

By Business Desk | Published: October 8, 2021, 9:05 pm
Allauddin Khan
Ad Slot Below Image (728x90)

বিশেষ প্রতিবেদন: ধর্ম বোঝে না সুর। তা বাঁধে হিন্দু মুসলিম সবাইকে। গাঁথে একসূত্রে। সেই সূত্র ধরেই ছোট্ট আলাউদ্দিন (Allauddin Khan) স্কুল ফাঁকি দিয়ে চলে যেতেন শিবমন্দিরে। চুপ করে বসে শুনতেন সেতারের সুর। আবার চলে ফকিরদের আস্তানায়। ডুব দিতেন হামদ, নাত, মুর্শিদি, মারফতিসহ বিভিন্ন গান-বাজনার জলসায়। এত স্কুল ফাঁকি দিতে গিয়ে একদিন ধরা পড়ে গেলেন। পেলেন শাস্তি। সুর শেখার জন্য শাস্তি? প্রতিজ্ঞা করেন সুর সাধনাতেই কাটাবেন জীবন। আর ফিরে তাকাননি। বাড়ি থেকে পালিয়েই তিনি হয়ে ওঠেন সঙ্গীত সম্রাট উস্তাদ আলাউদ্দিন খাঁ। 

তখন তার বয়স মেরে কেটে আট কী নয়। রাতের অন্ধকার বেরিয়ে পড়েন অজানার উদ্দেশ্যে। এভাবে জারি, সারি, বাউল, ভাটিয়ালী, কীর্তন ও পাঁচালীসহ প্রভৃতি গানের সঙ্গে ব্যাপকভাবে পরিচিতি লাভ করেন। বাংলার জনপদে ঘুরে ঘুরে তিনি খুঁজে পান লোক সুরের ভান্ডার। সঙ্গীতে অতুলনীয় অবদানের স্বীকৃতি স্বরূপ ব্রিটিশ সরকার তাকে ‘খাঁ সাহেব’ উপাধিতে ভূষিত করেন। ১৯৩৫ সালে বিশ্বখ্যাত নৃত্যশিল্পী উদয়শঙ্করের সঙ্গে বিশ্ব ভ্রমণে বের হন তিনি। এ সময় তিনি ইংল্যান্ডের রানী কর্তৃক সুরসম্র্রাট খেতাবপ্রাপ্ত হন। ভারত সরকার ১৯৫২ সালে প্রদান করেন সঙ্গীত একাডেমী পুরস্কার। ১৯৫৮ সালে তিনি ‘পদ্মভূষণ’ এবং ১৯৭১ সালে ‘পদ্ম বিভূষণ’ উপাধি প্রাপ্ত হন। ১৯৬১ সালে বিশ্ব ভারতীয় ‘দেশি কোত্তম’ উপাধি লাভ করেন। দিল্লী ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে প্রাপ্ত হন ডক্টর অব ল’ ডিগ্রি। ১৯৫২ সালে শান্তিনিকেতনে বিশ্বভারতী বিশ্ববিদ্যালয়ে ‘দিনেন্দ্র অধ্যাপক’ হিসেবে কিছুদিন অধ্যাপনাও করেছিলেন।

বাবা আলাউদ্দিন খান নামেও তিনি পরাচিত ছিলেন। সেতার ও সানাই এবং রাগ সঙ্গীতে বিখ্যাত ঘরানার গুরু হিসাবে সারা বিশ্বে তিনি প্রখ্যাত। মূলত সরোদই তাঁর শাস্ত্রীয় সঙ্গীতের বাহন হলেও সাক্সোফোন, বেহালা, ট্রাম্পেট সহ আরো অনেক বাদ্যযন্ত্রে তাঁর যোগ্যতা ছিল অপরিসীম। শাস্ত্রীয় সঙ্গীতের দুনিয়ায় তিনি হয়ে উঠেছিলেন প্রবাদ পুরুষ।

উস্তাদজীর জন্ম ত্রিপুরার কুমিল্লা জেলার অন্তর্গত ব্রাহ্মণবাড়িয়া উপজেলার শিবপুর গ্রামে, যা এখন বাংলাদেশের অন্তর্গত। তার পিতা সবদও হোসেন খাঁ ওরফে সদুখাঁও ছিলেন বিশিষ্ট সঙ্গীতজ্ঞ। আলাউদ্দিনের ডাকনাম আলম। তাঁর শৈশব কাটে মূলত এক সঙ্গীত কাননে। ফলে সঙ্গীতের স্বাভাবিক নেশা তাকে পেয়ে বসে শৈশবে কালেই। তিনি প্রথম তালিম গ্রহণ করেন বড় ভাই সঙ্গীত সাধক ফকির আফতাব উদ্দিন খাঁর কাছে। পরবর্তীতে পণ্ডিত গোপালচন্দ্র চক্রবর্তীর সাগরেদ হন। একাধারে সাত বছর তার কাছে সঙ্গীত শেখেন। হঠাৎ প্লেগ রোগে আক্রান্ত হয়ে পণ্ডিত গোপালচন্দ্র ১৯০৩ সালে মারা যাওয়ার পর তিনি গান-বাজনা ছেড়ে দিয়ে ‘ফোর্ট উইলিয়াম’-এর বিখ্যাত ব্যান্ড মাস্টার লবো সাহেবের কাছে পাশ্চাত্য কায়দায় বেহালা শিখতে শুরু করেন।

এরপর তিনি অমর দাস, নন্দলাল, ‘স্টার থিয়েটার’-এর সঙ্গীত পরিচালক অমৃত লাল দত্ত ওরফে হাবু দত্ত এদের কাছে বাঁশি , পিক্র, সেতার , মেন্ডেলীণ ,ব্যাঞ্জো এবং সানাই , নাকাড়া , টিকাবা সহ সকল বাদ্যযন্ত্রেই দক্ষতা অর্জন করে হয়ে উঠেন একজন সর্ববাদ্য বিশারদ। পরে তিনি কলকাতায় একজন বাঁশীবাদক হিসেবে তাঁর সঙ্গীত জীবন শুরু করেন।

আলাউদ্দিন খাঁ ময়মনসিংহের মুক্তাগাছায় জমিদার রাজা জগৎকিশোর-এর বাড়িতে ওস্তাদ আহমদ আলী খাঁর কাছেও সুরের তালিম নেন। পরে উদয়পুরে ওস্তাদ ওয়াজির খা-র কাছে দীর্ঘ ১৪বছর তালিম গ্রহণ করেন। ওয়াজির খাঁর কাছে তিনি সেনী ঘরানার গুরুত্বপূর্ন সঙ্গীত কৌশল চর্চা করেন। এর কিছুকাল পরে ১৯১৮ সালে তিনি মাইহারের মহারাজ ব্রজনাথ সিং-এর দরবারে সঙ্গীতজ্ঞ হিসেবে যোগদান করেন। মহারাজা তাঁর শিষ্যত্ব গ্রহণ করেন।

এরপর তিনি অনাথ, অন্ধ নামগোত্রহীন প্রায় একশো জনকে জড়ো করে, তাদের উপযুক্ত শিক্ষা দিয়ে তৈরি করেছিলেন বিশ্ববিখ্যাত ‘মাইহার ব্যান্ড’। তাঁর উদ্ভাবিত যন্ত্র – মনোহরা, চন্দ্রসারং, কাষ্ঠতরঙ্গ প্রভৃতি ।

তার উদ্ভাবিত ঘরানা এখন সঙ্গীত জগতে ‘আলাউদ্দিন ঘরানা’ নামে পরিচিতি লাভ করেছে। তিনি বেশ কয়েকটি রাগ-রাগিনীরও স্রষ্টা, যেমনঃ- মেঘবাহার, দুর্গেশ্বরী, হেমন্ত, মদন মঞ্জরী, প্রভাত কেলী, ধবল শ্রী, শোভাবতী, রাজেশ্রী, ধনকোষ, আরাধনা ইত্যাদি।

তিনি স্ত্রী মদন মঞ্জরী দেবীর (মদিনা বেগম) নামানুসারে রাগ সঙ্গীত মদন মঞ্জরী ও মাইহারের বাসভবনের নামকরণ করেন মদিনা ভবন। বহু সংখ্যক যোগ্য শিষ্য তৈরি তার অনবদ্য কীর্তি। তার শিষ্যদের মধ্যে পুত্র আলী আকবর খান, কন্যা অন্নপূর্না, জামাতা রবি শঙ্কর, তিমির বরণ, খাদেম হোসেন খান, মীর কাশেম খান, পান্নালাল ঘোষ, নিখিল বন্দ্যোপাধ্যায়, ইন্দ্রনীল ভট্টাচার্য প্রমুখের নাম উল্লেখ করা যেতে পারে। মাইহারের মুকুট বিহীন সম্রাট ওস্তাদ আলাউদ্দিন খাঁ। সেখানে তাঁকে সবাই “বাবা” বলে ডাকতো। তাঁর হাতে মাইহার ঘরানার শাস্ত্রীয় সঙ্গীত পেয়েছিল এক নতুন রূপ।

[custom_poll]
In-Article Ad (Responsive)
Ad Slot End of Article (728x90)

Related Articles