🚨 Breaking: Welcome to Kolkata24x7 — fast, modern news theme…
Leaderboard Ad (728x90)

Ajit Kumar Guha: ভাষা আন্দোলনের মূর্ত প্রতীক এই বাঙালি

By Kolkata24x7 Desk | Published: November 13, 2021, 9:55 pm
Ajit Kumar Guha
Ad Slot Below Image (728x90)

বিশেষ প্রতিবেদন: শান্তিনিকেতনে থাকার সময় তিনি রবীন্দ্রসাহিত্যে ব্যুৎপত্তিলাভ করেন। পরর্বর্তীকালে এ বিষয়ে তিনি প্রজ্ঞাবান ও মননশীল প্রবন্ধ রচনা করেছিলেন। তিনি রবীন্দ্রনাথের সঞ্চয়িতা, সোনার তরী ও গীতাঞ্জলি এবং কালিদাসের মেঘদূত-এর মত গুরুত্বপূর্ণ সাহিত্যগ্রন্থ সম্পাদনা করেন ও এগুলির জন্য মূল্যবান ভূমিকা লেখেন।

এছাড়াও সাহিত্য, শিক্ষা ও সংস্কৃতি সম্পর্কে তিনি বহু প্রবন্ধ রচনা করেন। অসাম্প্রদায়িক ও প্রগতিশীল চিন্তা-চেতনার জন্য অজিতকুমার যেমন শিক্ষার্থী ও সহকর্মীদের অত্যন্ত প্রিয় ছিলেন; আবার এই একই কারণে সরকারের রোষানলে পড়ে তিনি ১৯৪৮ সালে প্রথম কারাবরণ করেন। ভাষা আন্দোলনের একজন বলিষ্ঠ সংগঠক হিসেবে তাঁকে ফের ১৯৫২ সালে আবার গ্রেপ্তার করা হয়। ১৯৫৪ সালে জেল থেকে মুক্তি পাওয়ার কয়েক মাস পর তিনি পুনরায় গ্রেপ্তার হয়ে দীর্ঘ সময় কারাবাস করার কারণে গুরুতর অসুস্থ হয়ে পড়েন। তাঁর কারাজীবনের সঙ্গী ছিলেন আবুল হাশিম, অলি আহাদ, অধ্যাপক মুনীর চৌধুরী প্রমুখ।

একজন কৃতী সাতিহ্য সমালোচক হিসেবে সর্বমহলে অজিতকুমার গুহ ছিলেন সমাদৃত। সম্পাদনায় তিনি ছিলেন সিদ্ধহস্তের অধিকারী। মেঘদূত, কৃষ্ণকান্তের উইল, গীতবিতান, গীতাঞ্জলি, সঞ্চয়িতা— এই পাঁচটি গ্রন্থ তিনি সম্পাদনা করেন। তাঁর প্রকাশিত গল্প, প্রবন্ধ ও স্মৃতিকথার সংখ্যা অনেক। ‘কায়কোবাদ: কাব্য সৃষ্টির পটভূমিকা, ‘নজরুল কাব্যে পুরাণ’ ‘রবীন্দ্রকথা’, ‘রবীন্দ্র কাব্যে পরবর্তী পরিবর্তন’, ‘রবীন্দ্রনাথ ও পদ্মা’ শীর্ষক প্রবন্ধগুলো পাঠ করে বাংলা সাহিত্যে অধ্যয়নরত ছাত্রছাত্রীরা বিশেষ উপকৃত হচ্ছে। অধ্যাপক অজিতকুমার গুহ ও আনিসুজ্জামান রচিত ও সংকলিত নতুন বাংলা রচনা আজও ছাত্রছাত্রীদের কাছে অতি মূল্যবান গ্রন্থ।

তিনি প্রত্যক্ষ রাজনৈতিক কর্মকাণ্ডের সঙ্গে যুক্ত না থাকলেও চিন্তা-চেতনায় অরাজনৈতিক ছিলেন না বলেই ১৯৬৮ সালে জগন্নাথ কলেজ প্রাদেশিকীকরণ করা হলে পদত্যাগ করে কয়েক মাস বেকার জীবন যাপন করেন। এমতাবস্থায় অনেকটা অনন্যোপায় হয়ে প্রথমে টিঅ্যান্ডটি কলেজের উপাধ্যক্ষ, জুবিলী স্কুলে অবস্থিত নৈশ কলেজে অধ্যক্ষ হিসেবে স্বল্পকালীন দায়িত্ব পালন করেন।

অজিতকুমার কুমিল্লা শহরের সুপারিবাগানে জন্মগ্রহণ করেন। তার পিতার নাম নৃপেন্দ্রমোহন গুহ। ১৯৩০ সালে তিনি কুমিল্লার ঈশ্বর পাঠশালা থেকে ম্যাট্রিক পাস করে কুমিল্লা ভিক্টোরিয়া কলেজ থেকে আই. এ (১৯৩২) ও বি. এ (১৯৩৪)। ১৯৩৬ সালে কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হন এবং সেখান থেকে বাংলায় এম. এ (১৯৩৯) পাস করেন। পরে তিনি বি.টি পরীক্ষায়ও প্রথম শ্রেণীতে প্রথম হয়ে উত্তীর্ণ হন।

১৯৪২ সালে ঢাকার প্রিয়নাথ হাইস্কুলে শিক্ষকতার মধ্য দিয়ে অজিতকুমার কর্মজীবন শুরু করেন। প্রায় ছয় বছর এই স্কুলে শিক্ষকতা করার পর তিনি ১৯৪৮ সালে জগন্নাথ কলেজের বাংলা বিভাগের অধ্যাপক ও পরে বিভাগীয় প্রধান হন। তিনি ১৯৬৮ সালের ৩১ জুলাই এখান থেকে অবসর নেন। এর মধ্যে ১৯৫৭-৫৮ সালে তিনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বাংলা বিভাগের খণ্ডকালীন অধ্যাপক ছিলেন। জগন্নাথ কলেজ ছেড়ে তিনি ঢাকার টিচার্স ট্রেনিং কলেজের উপাধ্যক্ষ পদে যোগদান করেন।

১৯৬৯ সালের ১ বৈশাখ রমনা বটমূলে বাংলা ভাষা সাহিত্য-সংস্কৃতি সম্পর্কে দেওয়া বক্তব্যকে শাসকগোষ্ঠী সামরিক আইনের ১৯ ধারা লঙ্ঘন বলে অভিযুক্ত করে ২৭ এপ্রিল উপ-আঞ্চলিক সামরিক আইন প্রশাসকের পক্ষে মেজর মমতাজ মালিক অজিতকুমার গুহকে কারণ দর্শানোর নির্দেশ দেন। এ ঘটনাও তিনি সাহসের সঙ্গেই মোকাবিলা করেন।

অতঃপর কয়েকজন উদারমনা শিক্ষকের প্রচেষ্টায় চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের বাংলা বিভাগে একটি বিশেষ পদে যোগদানের বিষয়টি মোটামুটি চূড়ান্ত হলে তিনি অনিচ্ছা সত্ত্বেও ঢাকা ছাড়তে সম্মত হন। চট্টগ্রামে যাওয়ার প্রস্তুতি নিয়ে ১৯৬৯ সালের ১২ নভেম্বর সকালে কুমিল্লায় এসে রাতে নিজ বাসভবনে মৃত্যুবরণ করেন।

অজিতকুমার গুহকে মূল্যায়ন করতে গিয়ে শিক্ষাবিদ আনিসুজ্জামান লিখেছেন, ‘মানুষের জীবন গ্লানিমুক্ত হোক, ভাষা তার স্বাভাবিক স্থান অধিকার করুক, গড়ে উঠুক সুস্থ সাহিত্য, সাম্প্রদায়িকতার বিষবাষ্প থেকে দেশ অব্যাহতি লাভ করুক—এই ছিল তাঁর কামনা। জনপ্রিয় শিক্ষকরূপে, সচেতন নাগরিকরূপে, উৎসাহী সংস্কৃতিসেবীরূপে এই প্রেরণা তিনি দিয়ে গেছেন আমাদের। এই সত্যনিষ্ঠ আদর্শপ্রিয় মানুষের সেই দান আমাদের চিত্তে স্থায়ী হয়ে রইল।’

ঐতিহাসিক ভাষা আন্দোলনে বিশেষ অবদানের জন্য অধ্যাপক অজিতকুমার গুহকে ভাষা আন্দোলনের ৫০ বছর পূর্তি উপলক্ষে ২০০২ সালে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ ‘ভাষাসৈনিক সম্মাননা পদক’ ও তমদ্দুন মজলিস ‘মাতৃভাষা পদক-২০০৪’-এ ভূষিত করেছে। মহান ভাষা আন্দোলনে বিশেষ অবদানের জন্যে বাংলাদেশ সরকার অধ্যাপক অজিত কুমার গুহকে মরণোত্তর ২১ শে পদকে ভূষিত করেন।

[custom_poll]
In-Article Ad (Responsive)
Ad Slot End of Article (728x90)

Related Articles