বার্সেলোনার নতুন ভরসা আনসু ‘১০’ ফাতি

অনুভব খাসনবীশ: ফুটবল রাজার খেলা না হলেও খেলার রাজা। এই খেলাকে ঘিরেই ছেড়া কাঁথায় শুয়ে স্বপ্ন দেখে অনেকে। শূন্য থেকে শুরু করা অনেককেই সাফল্যের শিখরে…

অনুভব খাসনবীশ: ফুটবল রাজার খেলা না হলেও খেলার রাজা। এই খেলাকে ঘিরেই ছেড়া কাঁথায় শুয়ে স্বপ্ন দেখে অনেকে। শূন্য থেকে শুরু করা অনেককেই সাফল্যের শিখরে পৌঁছে দিয়েছে সে। অতীতের মারাদোনা থেকে শুরু করে বর্তমানের মেসি, রোনান্ডো। তাদের রাস্তা ধরেই ক্রমাগত ফুটবলের রাজপথে এসে দাঁড়াচ্ছে বহু প্রতিভা। যারা স্বপ্ন দেখছে, স্বপ্ন দেখাচ্ছে। তেমনই একজন হলেন আনসু ফাতি (Ansu Fati)।

স্পেনের ১৮ বছরের এই বিস্ময় বালককে নিয়ে এর মধ্যেই স্বপ্ন দেখতে শুরু করেছে গোটা দুনিয়া। পশ্চিম আফ্রিকার অন্যতম দরিদ্র দেশ গুইনিয়া-বিসাউতে জন্ম তার। ছোটো থেকেই ফুটবলার হওয়ার স্বপ্ন দেখতেন তিনি। তার বাবা বোরি বুঝতে পারেন, যে দেশে ৬৯ শতাংশ মানুষ দারিদ্রসীমার নীচে বসবাস করে এবং ২৫ শতাংশ অপুষ্টির শিকার সেখানে ফুটবলের স্বপ্ন সত্যি হওয়া একটি খুব কঠিন বিষয়। মাত্র ৬ বছর বয়সে হারারে, সেভিল্লাতে ছেলের স্বপ্ন পূরণ করতে পরিবারসহ চলে আসেন তিনি।

Ansu Fati

ছোটবেলায় আর্থিক স্বাচ্ছল্য না থাকায় রাস্তায় খেলে বেড়ানো ছেলেটির ফুটবল অভিষেক হয় মাত্র ১৬ বছর বয়সে। এর মধ্যেই জাতীয় দল স্পেন এবং বার্সেলোনার নিয়মিত সদস্য হয়ে উঠেছে আনসু ফাতি। মাত্র ১৮ বছর বয়সেই তার নামের পিছনে থাকা রেকর্ডের সংখ্যা তার বয়সের সংখ্যার থেকে বেশি। ১৯৩৬ সালে স্পেনের হয়ে মাঠে নেমেছিলেন ১৭ বছর ২৮৩ দিন বয়সের অ্যাঞ্জেল জুবিয়েতা। তার ঠিক ৮৪ বছর বাদে জাতীয় দলের হয়ে অভিষেক হয় আনসু ফাতির। বয়স ১৭ বছর ৩০৭ দিন, জুবিয়েতার থেকে মাত্র ২৪ দিনের বড়। স্পেনের ইতিহাসে দ্বিতীয় সর্বকনিষ্ঠ খেলোয়াড় হিসেবে মাঠে নামার তিনদিনের মাথায় অবশ্য ইউক্রেনের বিরুদ্ধে গোল করে স্পেনের সর্বকনিষ্ঠ গোলদাতার পালক মুকুটে গোঁজেন তিনি। ম্যাচটিতে স্পেন ৪-০ গোলে যেতে। গোল করে ওয়েন রুনি, কিলিয়ান এমবাপে, মইসে কেনদের ক্লাবে ঢুকে পড়লেন আনসু ফাতি।

গত বছর থেকেই কাতালুনিয়ান ক্লাব বার্সেলোনার সিনিয়র টিমের হয়ে খেলছেন তিনি। এর আগে ২০১০-২০১২ সেভিল্লার যুব দলে খেলে যোগ দেন বার্সেলোনার বিখ্যাত ‘লা মাসিয়া’ অ্যাকাডেমিতে। ২০১৯ সালে যুব দল থেকে সিনিয়র দলে আসেন। ৩১ নম্বর জার্সি পরে উইঙ্গার পজিশনে খেলা আনসু ফাতি ইতিমধ্যে বার্সার হয়ে ২৪ টি ম্যাচে ৭ টি গোল করে ফেলেছেন তিনি। লা লিগায় বার্সেলোনার হয়ে তিনি ওসাসুনা, ভ্যালেন্সিয়ার মতো দলের বিরুদ্ধে গোল পেয়েছেন। ২০১৯ সালে উয়েফা চ্যাম্পিয়ন্স লিগে ইতালির বিখ্যাত ক্লাব ‘ইন্টার মিলান’য়ের জালে বল জড়িয়ে লিগের ইতিহাসের সর্বকনিষ্ঠ গোলদাতা হন।

Lionel Messi vs Ansu Fati: Which Barcelona star was the better player at  17? | GiveMeSport

বার্সেলোনায় তার সামনেই খেলতেন পৃথিবীর অন্যতম সেরা ফুটবলার লিওনেল মেসি। এছাড়াও লুইস সুয়ারেজ, অ্যান্তেনো গ্রিয়েজম্যান, আর্তুরো ভিদালের মতো খেলোয়াড়দের সাথে খেললেও এযাবৎ কোনও আত্মবিশ্বাসের ঘাটতি দেখা যায়নি তার মধ্যে। বরং প্রতি মুহূর্তেই যেন নিজেকে প্রমাণ করার তাগিদ নিয়েই বল দখলের লড়াইতে ছোটেন তিনি।

আরও পড়ুন সাম্প্রদায়িকতা ছড়ানোয় সুপ্রিম কোর্টের তোপের মুখে দেশের ওয়েব পোর্টালের একাংশ

ইতিমধ্যেই বার্সেলোনা ছেড়েছেন লুইস সুয়ারেজ, অ্যান্তেনো গ্রিয়েজম্যান, আর্তুরো ভিদালরা। সাধের ক্লাব ছেড়ে প্যারিস সাঁ-জাঁ জার্সি গায়ে চাপিয়েছেন লিওনেল মেসিও। প্রবল যন্ত্রণা ও হতাশার মাঝেই বার্সেলোনা ছেড়ে পিএসজিতে যোগ দিয়েছেন আর্জেন্তাইন কিংবদন্তী। ফুটবল বিশেষজ্ঞরা বলছেন এই অবস্থায় ‘বিস্ময় বালক’ আনসু ফাতিই সামনের মরশুমে ভরসা দিতে চলেছেন বার্সেলোনাকে। বোধহয় সে কথাই বিশ্বাস করেন বার্সার ক্লাব অফিসিয়ালরাও। ফলে ক্লাবের তরফ থেকে মেসির বিখ্যাত জার্সি নম্বর তুলে দেওয়া হল আনসু ফাতির পিঠেই। অন্যদিকে তার কন্ট্র্যাক্ট রিনিউ করাও এখন বড় কাজ কাতালুনিয়ান ক্লাবের কাছে। কয়েকদিন আগেই শোনা গিয়েছে মেসিকে না পেয়ে ম্যাঞ্চেস্টার সিটি চাইছে ফাতিকে। কিন্তু নিজেদের নতুন তারকাকে হারাতে রাজি নয় বার্সেলোনাও।

শুধু বার্সেলোনাই নয়, এই ফর্ম ধরে রাখতে পারলে ২০২২ সালের কাতার বিশ্বকাপে স্পেনেরও অন্যতম শক্তি হতে চলেছেন তিনি। অন্তত তার খেলা দেখে এমনটাই মত তামাম বিশ্বের ফুটবল বোদ্ধাদের।