🚨 Breaking: Welcome to Kolkata24x7 — fast, modern news theme…
Leaderboard Ad (728x90)

অসুস্থতার মধ্যে বিশ্রামের তোয়াক্কা না করে ফিরোজ গান্ধি মৃত্যুকে ডেকে এনেছিলেন

By Political Desk | Published: September 8, 2021, 2:42 pm
Feroze Gandhi
Ad Slot Below Image (728x90)

বিশেষ প্রতিবেদন:  ১৯৬০ সালের ৭ সেপ্টেম্বর যেদিন ফিরোজের (Feroze Gandhi) তৃতীয়বার হার্ট অ্যাটাক হল সেদিনও ইন্দিরা নেই দিল্লিতে, তিনি সেদিন কেরলে রয়েছেন৷ এর ঠিক বছয় দুয়েক আগে যেদিন ফিরোজের প্রথম হার্ট অ্যাটাক হয়েছিল সেদিনও ইন্দিরা ছিলেন দিল্লির বাইরে৷

বছর দুয়েক আগের কথা সেটাও ছিল সেপ্টেম্বর মাস৷ আগের দিন রাতে ফিরোজ গান্ধির হার্ট অ্যাটাক হওয়ায় , ১৯৫৮ সালের ২৩ সেপ্টেম্বর সকালে ওয়েলিংডন হাসপাতালে ভর্তি হতে হল তাঁকে। খবর পেয়ে হাসপাতালে আসেন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী পন্থ এবং শিল্প বাণিজ্যমন্ত্রী লাল বাহাদুর শাস্ত্রী। রাতের দিকে অনেকটাই শারীরিক অবস্থার উন্নতি হয়।খবর পাওযার পর সন্ধ্যেবেলায় পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী ডাক্তার বিধানচন্দ্র রায় ফিরোজের দেখভালের দায়িত্বে থাকা ডাক্তারদের সঙ্গে ফোনে কথা বলেন এবং চিকিৎসার বিষয় তাঁর পরামর্শ দেন।দিল্লিতে যখন এই সব ঘটনা‌ ঘটছে তখন প্রধানমন্ত্রী নেহরু রয়েছেন ভুটান সফরে। নেহরুর সঙ্গে ইন্দিরাও গিয়েছেন ওই সফরে৷ সেখানেই ইন্দিরা ফিরোজের অসুস্থতার খবর পান। তবে সেদিন সন্ধেবেলায় অবস্থার উন্নতি হওয়ায় ফিরোজের বিপদ কেটে গিয়েছে তাদের আর তাড়াহুড়ো করে ভুটান থেকে আসার দরকার নেই বলে বার্তা যায় নেহরু ও তাঁর কন্যার কাছে।কারণ খবর পেয়ে প্রথমে তাঁরা সফর কাটছাট করে ফেরার কথা ভাবছিলেন৷ সিকিম ভুটান সফর সেরে তারা কয়েকদিন পরে ফিরলে নেহরু পালাম বিমানবন্দর থেকে প্রধানমন্ত্রীর বাসভবনে গেলেও, অন্য গাড়িতে করে ইন্দিরা চলে আসেন সরাসরি হাসপাতালে‌ অসুস্থ স্বামীকে দেখতে। সেখানে গিয়ে সেদিন ফিরোজের কাছে ছিলেন আধঘন্টা। ভর্তি হওয়ার পর সাত সপ্তাহের বেশি দিন কাটিয়ে হাসপাতাল থেকে ছাড়া পান ফিরোজ। ছাড়া পেলেও চিকিৎসকদের পরামর্শ ছিল তারপরেও অন্তত দিন ১৫ যেন তিনি বিশ্রাম নেন।

হাসপাতাল থেকে ছাড়া পেলেও বিশ্রামের তোয়াক্কা করেন না ফিরোজ৷ যথারীতি আগের মতোই জীবন৷ বরং তখন যেন একটু বেশিই পরিশ্রম করতে তাঁকে দেখা যাচ্ছিল বলে মনে হয়েছিল তাঁর পরিচিত মহলের একাংশের৷ ইন্দর মালহোত্রার মতে , ফিরোজ যতই তার বন্ধু এবং শুভানুধ্যায়ীদের দ্বারা পরিবৃত হয়ে থাকুন না কেন, তিনি প্রকৃতপক্ষে খুবই একা এবং মানসিক ভাবে দুঃখে ছিলেন। আর তাই অতিরিক্ত কাজের মধ্যে ডুবে থেকে নিজেকে শেষ করে দেন। তাছাড়া ফিরোজের পরিচিত অনেকেই লক্ষ্য করেছিলেন ডাক্তারেরা সিগারেট এবং মদ্য পান করতে নিষেধ করলেও তিনি তা একেবারেই শুনতেন না।

এই অসুস্থতার মধ্যেও গত দুবছর তিনি নিয়মিত সংসদে হাজিরা দিতেন, সময় ভাগ করে নিতেন বিতর্কে অংশ নেওয়া এবং লবিতে থাকার জন্য। তৃতীয়বার হার্ট অ্যাটাকের কয়েকদিন আগে ফিরোজ তাঁর ক্লান্তির কথা বলেছিলেন ঘনিষ্ঠ মহলে৷ সর্বপল্লী রাধাকৃষ্ণণের নজরে এসেছিল শেষ কয়েক মাস ফিরোজ কী রকম রীতিমতো পরিশ্রম করেছেন। তিনি ফিরোজ সম্পর্কে বলেছিলেন, ‘‘উনি ডাক্তারের এবং বন্ধু-বান্ধবের পরামর্শ অগ্রাহ্য করেই রীতিমত পরিশ্রম করতেন শুধুমাত্র সাংসদ হিসেবে নয়, রাষ্ট্রায়ত্ত তেল সংস্থার চেয়ারম্যান হিসেবেও এই সময় যথেষ্ট কাজ করতে দেখা যেত। এই বিশেষ দায়িত্ব থাকার জন্য দুটি তৈল শোধনাগারের কাজের বিষয়ে বুঝতে ১৪ সেপ্টেম্বর তার বম্বে যাওয়ার কথা ছিল।’’ তাছাড়া রাধাকৃষ্ণণকে ফিরোজ জানিয়েছিলেন, তাঁর নিজের লোকসভা কেন্দ্রে তিনি একটি কলেজ গড়তে চান৷ আর সেজন্য তহবিল জোগাড়ের উদ্দেশ্যে ফিরোজ বম্বে এবং অন্যান্য জায়গায় যাওয়ার পরিকল্পনা করেছিলেন।

এদিকে যথারীতি ৭ সেপ্টেম্বরেও ফিরোজ লোকসভায় এলেন এবং বিকেল পর্যন্ত ছিলেন। তারপর তিনি ওয়েলিংডন নার্সিংহোমের সুপারেনটেনডেন্ট ডাক্তার খোসলাকে ফোন করেন শারীরিক কারণে। এই ডাক্তার খোসলা তাঁর ব্যক্তিগত বন্ধু৷ তাছাড়া ১৯৫৮ সালে তার প্রথম হার্ট অ্যাটাকের পর থেকেই ফিরোজের চিকিৎসার দায়িত্বে রয়েছেন তিনি। ফোন পাওয়ার পরেই তিনি উদ্বিগ্ন হয়ে ফিরোজকে অনুরোধ করেন না বের হতে। কিন্তু ডাক্তারের পরামর্শ শোনার পাত্র তো তিনি নন৷ গত পাঁচদিন ধরে বুকে ব্যথা হচ্ছিল, সেই সব উপেক্ষা করেই তিনি সংসদ ভবন থেকে নার্সিংহোমের দিকে গাড়ি চালিয়ে রওনা দিলেন। এরপর সেখানে গিয়ে ডাক্তারের সঙ্গে কথা বলার পর চা খাবেন ঠিক করেন। চা দেওয়া হলে তিনি হঠাৎ ঢলে পড়েন। তখন তাকে বিছানায় নিয়ে এসে শুইয়ে দেওয়া হয়। খোসলা এবং আরও পাঁচ বিশেষজ্ঞ ডাক্তার ফিরোজকে ঘিরে রাখেন কিন্তু তিনি চিকিৎসায় ঠিকমতো সাড়া দেন না। ক্রমশ তাঁর শারীরিক অবস্থার অবনতি হতে থাকে। তবে যেটুকু জ্ঞান ছিল তাতে বারবার জানতে চাইছিলেন ইন্দিরা কখন আসবে। ইন্দিরা সেই সময় দলীয় কাজে ত্রিবান্দম গিয়েছেন। ইন্দিরা দিল্লি ফিরেই বিমানবন্দর থেকে সরাসরি নার্সিংহোমে চলে আসেন স্বামীকে দেখতে। ইন্দিরা তাকে দেখতে এলেও হাসপাতালের ফিরোজের শয্যার পাশে বেশিক্ষণ থাকতে পারেননি কারণ সে নিজেও সেদিন ছিল ভীষণ ক্লান্ত। ৮সেপ্টেম্বর ফিরোজের যখন মৃত্যু হয় তখন সে একেবারে একাই ছিল।

মৃত্যুর খবর পেয়ে নার্সিংহোমে সবার আগে পৌঁছে যান প্রধানমন্ত্রী জওহরলাল নেহরু এবং রাষ্ট্রপতি ডঃ রাজেন্দ্র প্রসাদ। মরদেহ নেহরুর বাসভবনে নিয়ে আসা হয়। ফিরোজের মৃত্যুর খবর ছড়িয়ে পড়তে প্রধানমন্ত্রীর বাসভবনে বহু মানুষের ভিড় জমে। শুধু ভিআইপি নয় বহু সাধারন মানুষ সেখানে পৌঁছে যায়। গীতা, রামায়ণ , বাইবেল , কোরান থেকে পাঠ হয় ।পাশাপাশি পার্শী পুরোহিত বিশেষ প্রার্থনার আয়োজন করেন। ইন্দিরা বসেছিলেন মৃতদেহের পাশে। নার্সিংহোম থেকে ফিরে শোকে থমথমে মুখ নিয়ে কিছুক্ষণ দোতলা ঘরের চুপ করে বসে থাকেন জওহরলাল। তার কিছুক্ষণ পরে উঠে এসে‌ বোনেদের এবং অন্যান্যদের বলেন অন্ত্যেষ্টিক্রিয়ার ব্যবস্থা করতে।

তিরঙ্গা জড়ানো ফিরোজের দেহ উন্মুক্ত ট্রাকের করে শেষযাত্রার জন্য রওনা দেয়। ওই ট্রাকে তখন দুই ছেলেকে নিয়ে ইন্দিরা, ফিরোজের বোন এবং ফিরোজের দীর্ঘদিনের বন্ধু কেডি মালব্য৷ প্রধানমন্ত্রী ভবন, বিজয় চক, ইন্ডিয়া গেট, রাজঘাট জুম্মা ব্রিজ ধরে এগিয়ে চলে মরদেহবাহী ট্রাক। বহু মানুষের ভিড় শেষযাত্রায়। সূর্যাস্তের সময় যমুনার তীরে নিগমবোধ ঘাটে এসে পৌঁছয়। ট্রাক থেকে নামিয়ে চিতায় তোলার সময় মানুষের ভিড়ে পদপৃষ্ট হয়ে যাবার উপক্রম। সেই ভিড় সামলাতে গিয়ে হিমশিম খেতে হয় পুলিশকে। কোনরকমে জওহরলাল এবং দুই ছেলের সঙ্গে চিতায় শায়িত ফিরোজের কাছে এসে পৌঁছন ইন্দিরা। শোকোস্তব্ধ ইন্দিরা ছলছলে চোখে তাঁর স্বামীর পায়ে কয়েকটা লিলি ফুল রাখেন।বৈদিক স্তোত্র পাঠের মধ্যে দিয়ে বড় ছেলে রাজীব দাহ করেন ।ফিরোজের শেষ যাত্রায় মানুষের ভিড় দেখে সেদিন পন্ডিতজি বলেছিলেন, “আমি বুঝতে পারিনি ফিরোজ এত জনপ্রিয়‌।”ফিরোজের মৃত্যুর কথা ছড়িয়ে পড়তে শোকে হতাশায় দিল্লি শহরের দোকান বাজারের শাটার নামিয়ে দেয় মানুষ। বহু জায়গা থেকে শোকবার্তা এসেছিল।

(উপরের অংশটি সম্প্রতি প্রকাশিত সিদ্ধার্থ মুখোপাধ্যায়ের লেখা ‘‘ফিরোজ গান্ধি সংসদের ভিতরে ও বাইরে’’ বইটির অংশ বিশেষ৷ বইটির প্রকাশক সৃষ্টিসুখ। মূল্য ১৮০টাকা৷ )

[custom_poll]
In-Article Ad (Responsive)
Ad Slot End of Article (728x90)

Related Articles